alt

উপ-সম্পাদকীয়

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আতুড়ঘর

শঙ্কর প্রসাদ দে

: মঙ্গলবার, ০২ এপ্রিল ২০২৪

২১ ডিসেম্বর ২০২৩, রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে অনুপম গাড়ি স্টার্ট দিল। অনুপম থাকে ক্যামব্রিজ রেসিডেন্সিয়াল এরিয়ার ২০৪নং বাড়ির নিচতলায়। শুধু বোস্টন নয় গোটা আমেরিকাতে রেসিডেন্সিয়াল এলাকার বাড়িগুলো ৩ তলার বেশি হয় না। বোস্টনের বহুতল ভবনগুলোর মালিক সিটি গভর্মেন্ট। বেশির ভাগ ফ্ল্যাটই স্টুডিও ডিজাইনের। মাত্র দুই রুমের ফ্ল্যাটে নাগরিক সুবিধার সবকিছুর ব্যবস্থা করা আছে। সিটি করপোরেশন ভাড়ার টাকা বেতন থেকে কেটে নেয়।

এমনিতে বোস্টন ছিমছাম কোলাহলমুক্ত স্বল্প জনসংখ্যার একটি শহর। এটিকে এডুকেশন হাব বলার যুক্তি আছে। ১৪৫টি মাধ্যমিক স্কুল। ৫০টি কলেজ ও ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয় হলো শহরটির প্রাণ। আমেরিকায় যে কয়টি এলাকা দিয়ে ব্রিটিশ উপনিবেশ শুরু হয় তার অন্যতম হলো বন্দর নগরী নিউ ইংল্যান্ড অর্থাৎ এই বন্দর নগরী দিয়ে অভিবাসন শুরু হয়েছিল বলে এটিকে নিউ ইংল্যান্ড ডাকা হতো। রাজ্যটির নাম ম্যাচাচুয়েটস। কিছু ক্যামব্রিজ গ্র্যাজুয়েট ইংল্যান্ড থেকে গিয়ে শহরের যে অংশে বসবাস শুরু করে সেটির নাম রাখা হয় ক্যামব্রিজ। পরবর্তীতে নিউ ইংল্যান্ড আর ক্যামব্রিজ অর্থাৎ চার্লস নদীর উভয় তীরকে একত্রে নামকরণ করা হয় বোস্টন। এটি ম্যাচাচুয়েটস রাজ্যের রাজধানী। মূল শহরের জনসংখ্যা মোটামুটি ৭ লাখ এবং বৃহত্তর বোস্টনের জনসংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ।

২১ ডিসেম্বর রাতে আমাদের সর্বশেষ রোমাঞ্চকর ভিজিট হলো হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ল্যাব। ঢুকার আগে কল্পনাও করতে পারিনি এতকিছু দেখব। এত বৈজ্ঞানিক অভিযাত্রার সাক্ষী হব। তপন কান্তি সিনহা (বড়–য়া) হার্ভার্ড সাইয়েন্টেফিক ল্যাবের একজন টেকনিশিয়ান। দীর্ঘদিন ধরে হার্ভার্ডে চাকরি করছেন সস্ত্রীক। একটি বিরল সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য চিরদিন স্মরণ করব।

রাত তখন প্রায় ১০টা। ১টি রিসার্চ রুমে ঢুকতেই পরিচয় হলো মার্কিন এক জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পিএইচডির মাঝবয়সী ছাত্রীর সঙ্গে। পরিচয়ের শুরুতেই বললেন তার পিএইচডি শেষ পর্যায়ে। প্রতিটি রুমের প্রতিটি টেবিলে ডিএনএ ও আরএনএ সøাইটগুলো সারি সারি বসানো আছে। ভদ্র মহিলা সংক্ষেপে জানালেন ডিএনএ ও আরএনএ প্রোফাইল সেটিংয়ের পর এগুলো ফলাফলের জন্য ল্যাবের নির্দিষ্ট কক্ষ, ফ্রিজ ও লকড ফ্রিজে চলে যাবে।

মানবিক বিভাগের ছাত্র হওয়ায় বিজ্ঞানে আমার জ্ঞান নেই বললে চলে। আক্কেল দিয়ে ইতিহাস, সাহিত্যে জ্ঞানার্জন করা সম্ভব। বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়ে সম্ভব নয়। তপন দা বললেন, ন্যাচারাল সায়েন্স অর্থাৎ জীববিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের বহুমাত্রিক গবেষণার জন্য হার্ভার্ড পৃথিবীখ্যাত। বিশ্ববিদ্যালয়টির সর্বশেষ চৌকস গবেষণা পর্বটির নাম জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং।

আমেরিকান বায়োকেমিস্ট স্টানলি এন কোহেন এবং বায়োটেকনোলজিস্ট হার্বাট ডব্লিউ বোয়ার যৌথভাবে ডিএনএও ধারণার প্রস্তাবনা ১৯৭৩ সালে উপস্থাপন করেন। কোহেন স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর ছিলেন। জেনেটিকস বিভাজন, বিভাজিত খ-কে ভিন্ন ডিএনএর সঙ্গে জোড়া লাগিয়ে বা বিভাজিত ডিএনএ ও আরএনএ থেকে প্রয়োজনে কোনো কোনো খ- বা অংশকে বাদ দেয়া যায় বা সংযুক্ত করা যায় মর্মে কোহেনের বক্তব্য তাত্ত্বিক ন্যাচারাল সায়েন্সে আলোড়ন সৃষ্টি করে। জেনেটিক্সের ক্ষুদ্রতম একক হলো ডিএনএ এবং আরএনএ।

খুব দ্রুত পৃথিবীব্যাপী ডিএনএ ও আরএনএ বিভাজন বা জেনেটিক তত্ত্ব নিয়ে প্রচুর যুগান্তকারী প্রযুক্তি আসতে শুরু করে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজির অধ্যাপক হার্বার্ট বোয়ার বাইরে থেকে ডিএনএ ও আরএনএ ঢুকিয়ে ব্যাকটেরিয়ার চরিত্র বদলের প্রযুক্তি আবিষ্কার করে কৃষি উৎপাদন এবং চিকিৎসা জগতে ব্যাপক গবেষণার দ্বার উম্মুক্ত করে দেন। কৃষি খামারে কত বিচিত্র রকমের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন হচ্ছে। কত নতুন নতুন ওষুধ আবিষ্কার হচ্ছে। সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা এসব উন্নত প্রযুক্তির ফসল, উদ্ভিদ, মৎস্যকে হাইব্রিড বলে থাকি। হাইব্রিডের এই সাফল্য মূলত ডিএনএ ও আরএনএ এর চরিত্র পরিবর্তন। এ প্রযুক্তি মানবজাতির খাদ্য নিরাপত্তাকে অনেক উন্নত করেছে। এসব কিছুর কৃতিত্ব কোহেন এবং বোয়ারের। তপন দা বিশেষ কিছু ফ্রিজ দেখিয়ে বললেন, ডিএনএসহ অন্যান্য হাইব্রিড সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তনের ফলাফলের জন্য দীর্ঘ বছর অপেক্ষা করা হয়। প্রশ্ন করেছিলাম মানব শরীরের কোনো অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বা অন্য উপাদানের ডিএনএ নিয়ে কি এখানে গবেষণা হয় না? বংশানুক্রমে জীন স্থানান্তরিত হয় ডিএনএর মাধ্যমে।

তপন দার জবাবে যা শুনলাম তাতে স্তম্ভিত হওয়ার শেষ নেই। বায়োকেমিস্ট ল্যাব দেখিয়ে বললেন, হার্ভার্ডের ল্যাবের যন্ত্রপাতির সব ব্যয়ভার ওষুধ কোম্পানিগুলো বহন করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে, কৃষি প্রযুক্তিবিদদের, রসায়নবিদদের পিএইচডির ব্যয়ভার এবং স্কলারশিপ ওষুধ কোম্পানিগুলো স্পন্সর করে থাকে। এতদিন মনে করতাম ওষুধ কোম্পানিগুলোর বড় বড় ল্যাবে ওষুধ আবিষ্কৃত হয় বা পরীক্ষা চালানো হয়। ভুল ভাঙল। আসলে পৃথিবীতে নতুন নতুন ওষুধ, ভেকসিন আবিষ্কার হয় হার্ভার্ডসহ বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।

সর্বশেষ রোমাঞ্চকর তথ্যটি তপন’দা জানিয়ে বললেন, মানব শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মধ্যে কিডনি, লিভার ও হার্ট নিয়ে হার্ভার্ডে মৌলিক গবেষণা হচ্ছে। মাইনাস ১০০ মাইনাস ১৫০ মাইনাস ২০০ ডিগ্রির অনেকগুলো ফ্রিজ দেখিয়ে বললেন, এসব ফ্রিজে প্রস্তাবিত কৃত্রিম কিডনি, লিভার, হার্টের ফর্মূলা ঢুকানো আছে ৪০-৫০ বছরের জন্য। ধারণা করা হচ্ছে এসব প্রকল্পগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটার ফলাফল ভালো আসবে এবং এরপর আরো কিছু সময় চলে যাবে সরাসরি পশুদেহে ও মানবদেহে ট্রায়ালে। ফ্রিজে কৃত্রিম কিডনি, হার্ট ও লিভার পরীক্ষাধীন আছে গত ত্রিশ বছর ধরে। সম্ভবত আরও ২০ বছর পর এসব ফ্রিজ খোলা হবে। ধারণা করা হয় একবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে এসে মানবজাতি কৃত্রিম হার্ট, কিডনি ও লিভার প্রতিস্থাপনে সক্ষম হবে। আসলে ১৯৮৬ সালে নোবেলজয়ী কোহেনের ডিএনএ ও আরএনএ বিভাজন তত্ত্ব এবং বোয়ারের ডিএনএ ও আরএনএ বিভাজন পরবর্তী সংযোজন বিয়োজন নিশ্চিতভাবে মানুষের গড় আয়ুকে নিয়ে যেতে পারে অদূর ভবিষ্যতে শতবর্ষের উপরে। গোটা বিশ্ব তাকিয়ে আছে হার্ভার্ডসহ পৃথিবীর নামকরা সব বিশ^বিদ্যালয়ের দিকে। অনেকে বলে থাকেন মানুষ একদিন মৃত্যুকেও জয় করতে সমর্থ হবে। ভীষ্মের ইচ্ছা মৃত্যু হয়েছিল। শতাব্দীর ব্যবধানে ইচ্ছামৃত্যুই হবে মানব জীবনের শেষ মুহূর্ত।

[লেখক : আইনজীবী, আপিল বিভাগ]

লোকসান কমাতে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো কতটা যৌক্তিক?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ও আগামী বাজেট

স্মার্ট দেশ গড়তে চাই স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয়

নিরাপদ সড়ক কেন চাই

মধ্যপ্রাচ্যে আগ্রাসন ও সন্ত্রাস সৃষ্টির দায় কার

ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের কাছে দোষ স্বীকারে সাক্ষ্যগত মূল্য ও বাস্তবতা

সমস্যায় জর্জরিত সড়ক, প্রতিকার কী

বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস

শিক্ষক নিয়োগ : পর্বতসম দুর্নীতির সামান্য প্রকাশ

সব মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে হবে

ছবি

চৌবাচ্চার ফুটো এবং আমাদের উন্নয়ন

কিশোর গ্যাং : নষ্ট রাজনীতির বিনষ্ট সংস্কৃতি

মন্ত্রণালয় ভাগ করে লাভবান হলো কারা?

রম্যগদ্য : মর্জিনার কলঙ্কিত দাগ

সোমালিয়ার গরিব জেলেরা কীভাবে জলদস্যু হলো

চিকিৎসা জগতের বাতিঘর জন হপকিনস বিশ^বিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও আজকের বাংলাদেশ

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

tab

উপ-সম্পাদকীয়

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আতুড়ঘর

শঙ্কর প্রসাদ দে

মঙ্গলবার, ০২ এপ্রিল ২০২৪

২১ ডিসেম্বর ২০২৩, রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে অনুপম গাড়ি স্টার্ট দিল। অনুপম থাকে ক্যামব্রিজ রেসিডেন্সিয়াল এরিয়ার ২০৪নং বাড়ির নিচতলায়। শুধু বোস্টন নয় গোটা আমেরিকাতে রেসিডেন্সিয়াল এলাকার বাড়িগুলো ৩ তলার বেশি হয় না। বোস্টনের বহুতল ভবনগুলোর মালিক সিটি গভর্মেন্ট। বেশির ভাগ ফ্ল্যাটই স্টুডিও ডিজাইনের। মাত্র দুই রুমের ফ্ল্যাটে নাগরিক সুবিধার সবকিছুর ব্যবস্থা করা আছে। সিটি করপোরেশন ভাড়ার টাকা বেতন থেকে কেটে নেয়।

এমনিতে বোস্টন ছিমছাম কোলাহলমুক্ত স্বল্প জনসংখ্যার একটি শহর। এটিকে এডুকেশন হাব বলার যুক্তি আছে। ১৪৫টি মাধ্যমিক স্কুল। ৫০টি কলেজ ও ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয় হলো শহরটির প্রাণ। আমেরিকায় যে কয়টি এলাকা দিয়ে ব্রিটিশ উপনিবেশ শুরু হয় তার অন্যতম হলো বন্দর নগরী নিউ ইংল্যান্ড অর্থাৎ এই বন্দর নগরী দিয়ে অভিবাসন শুরু হয়েছিল বলে এটিকে নিউ ইংল্যান্ড ডাকা হতো। রাজ্যটির নাম ম্যাচাচুয়েটস। কিছু ক্যামব্রিজ গ্র্যাজুয়েট ইংল্যান্ড থেকে গিয়ে শহরের যে অংশে বসবাস শুরু করে সেটির নাম রাখা হয় ক্যামব্রিজ। পরবর্তীতে নিউ ইংল্যান্ড আর ক্যামব্রিজ অর্থাৎ চার্লস নদীর উভয় তীরকে একত্রে নামকরণ করা হয় বোস্টন। এটি ম্যাচাচুয়েটস রাজ্যের রাজধানী। মূল শহরের জনসংখ্যা মোটামুটি ৭ লাখ এবং বৃহত্তর বোস্টনের জনসংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ।

২১ ডিসেম্বর রাতে আমাদের সর্বশেষ রোমাঞ্চকর ভিজিট হলো হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ল্যাব। ঢুকার আগে কল্পনাও করতে পারিনি এতকিছু দেখব। এত বৈজ্ঞানিক অভিযাত্রার সাক্ষী হব। তপন কান্তি সিনহা (বড়–য়া) হার্ভার্ড সাইয়েন্টেফিক ল্যাবের একজন টেকনিশিয়ান। দীর্ঘদিন ধরে হার্ভার্ডে চাকরি করছেন সস্ত্রীক। একটি বিরল সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য চিরদিন স্মরণ করব।

রাত তখন প্রায় ১০টা। ১টি রিসার্চ রুমে ঢুকতেই পরিচয় হলো মার্কিন এক জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পিএইচডির মাঝবয়সী ছাত্রীর সঙ্গে। পরিচয়ের শুরুতেই বললেন তার পিএইচডি শেষ পর্যায়ে। প্রতিটি রুমের প্রতিটি টেবিলে ডিএনএ ও আরএনএ সøাইটগুলো সারি সারি বসানো আছে। ভদ্র মহিলা সংক্ষেপে জানালেন ডিএনএ ও আরএনএ প্রোফাইল সেটিংয়ের পর এগুলো ফলাফলের জন্য ল্যাবের নির্দিষ্ট কক্ষ, ফ্রিজ ও লকড ফ্রিজে চলে যাবে।

মানবিক বিভাগের ছাত্র হওয়ায় বিজ্ঞানে আমার জ্ঞান নেই বললে চলে। আক্কেল দিয়ে ইতিহাস, সাহিত্যে জ্ঞানার্জন করা সম্ভব। বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়ে সম্ভব নয়। তপন দা বললেন, ন্যাচারাল সায়েন্স অর্থাৎ জীববিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের বহুমাত্রিক গবেষণার জন্য হার্ভার্ড পৃথিবীখ্যাত। বিশ্ববিদ্যালয়টির সর্বশেষ চৌকস গবেষণা পর্বটির নাম জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং।

আমেরিকান বায়োকেমিস্ট স্টানলি এন কোহেন এবং বায়োটেকনোলজিস্ট হার্বাট ডব্লিউ বোয়ার যৌথভাবে ডিএনএও ধারণার প্রস্তাবনা ১৯৭৩ সালে উপস্থাপন করেন। কোহেন স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর ছিলেন। জেনেটিকস বিভাজন, বিভাজিত খ-কে ভিন্ন ডিএনএর সঙ্গে জোড়া লাগিয়ে বা বিভাজিত ডিএনএ ও আরএনএ থেকে প্রয়োজনে কোনো কোনো খ- বা অংশকে বাদ দেয়া যায় বা সংযুক্ত করা যায় মর্মে কোহেনের বক্তব্য তাত্ত্বিক ন্যাচারাল সায়েন্সে আলোড়ন সৃষ্টি করে। জেনেটিক্সের ক্ষুদ্রতম একক হলো ডিএনএ এবং আরএনএ।

খুব দ্রুত পৃথিবীব্যাপী ডিএনএ ও আরএনএ বিভাজন বা জেনেটিক তত্ত্ব নিয়ে প্রচুর যুগান্তকারী প্রযুক্তি আসতে শুরু করে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজির অধ্যাপক হার্বার্ট বোয়ার বাইরে থেকে ডিএনএ ও আরএনএ ঢুকিয়ে ব্যাকটেরিয়ার চরিত্র বদলের প্রযুক্তি আবিষ্কার করে কৃষি উৎপাদন এবং চিকিৎসা জগতে ব্যাপক গবেষণার দ্বার উম্মুক্ত করে দেন। কৃষি খামারে কত বিচিত্র রকমের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন হচ্ছে। কত নতুন নতুন ওষুধ আবিষ্কার হচ্ছে। সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা এসব উন্নত প্রযুক্তির ফসল, উদ্ভিদ, মৎস্যকে হাইব্রিড বলে থাকি। হাইব্রিডের এই সাফল্য মূলত ডিএনএ ও আরএনএ এর চরিত্র পরিবর্তন। এ প্রযুক্তি মানবজাতির খাদ্য নিরাপত্তাকে অনেক উন্নত করেছে। এসব কিছুর কৃতিত্ব কোহেন এবং বোয়ারের। তপন দা বিশেষ কিছু ফ্রিজ দেখিয়ে বললেন, ডিএনএসহ অন্যান্য হাইব্রিড সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তনের ফলাফলের জন্য দীর্ঘ বছর অপেক্ষা করা হয়। প্রশ্ন করেছিলাম মানব শরীরের কোনো অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বা অন্য উপাদানের ডিএনএ নিয়ে কি এখানে গবেষণা হয় না? বংশানুক্রমে জীন স্থানান্তরিত হয় ডিএনএর মাধ্যমে।

তপন দার জবাবে যা শুনলাম তাতে স্তম্ভিত হওয়ার শেষ নেই। বায়োকেমিস্ট ল্যাব দেখিয়ে বললেন, হার্ভার্ডের ল্যাবের যন্ত্রপাতির সব ব্যয়ভার ওষুধ কোম্পানিগুলো বহন করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে, কৃষি প্রযুক্তিবিদদের, রসায়নবিদদের পিএইচডির ব্যয়ভার এবং স্কলারশিপ ওষুধ কোম্পানিগুলো স্পন্সর করে থাকে। এতদিন মনে করতাম ওষুধ কোম্পানিগুলোর বড় বড় ল্যাবে ওষুধ আবিষ্কৃত হয় বা পরীক্ষা চালানো হয়। ভুল ভাঙল। আসলে পৃথিবীতে নতুন নতুন ওষুধ, ভেকসিন আবিষ্কার হয় হার্ভার্ডসহ বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।

সর্বশেষ রোমাঞ্চকর তথ্যটি তপন’দা জানিয়ে বললেন, মানব শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মধ্যে কিডনি, লিভার ও হার্ট নিয়ে হার্ভার্ডে মৌলিক গবেষণা হচ্ছে। মাইনাস ১০০ মাইনাস ১৫০ মাইনাস ২০০ ডিগ্রির অনেকগুলো ফ্রিজ দেখিয়ে বললেন, এসব ফ্রিজে প্রস্তাবিত কৃত্রিম কিডনি, লিভার, হার্টের ফর্মূলা ঢুকানো আছে ৪০-৫০ বছরের জন্য। ধারণা করা হচ্ছে এসব প্রকল্পগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটার ফলাফল ভালো আসবে এবং এরপর আরো কিছু সময় চলে যাবে সরাসরি পশুদেহে ও মানবদেহে ট্রায়ালে। ফ্রিজে কৃত্রিম কিডনি, হার্ট ও লিভার পরীক্ষাধীন আছে গত ত্রিশ বছর ধরে। সম্ভবত আরও ২০ বছর পর এসব ফ্রিজ খোলা হবে। ধারণা করা হয় একবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে এসে মানবজাতি কৃত্রিম হার্ট, কিডনি ও লিভার প্রতিস্থাপনে সক্ষম হবে। আসলে ১৯৮৬ সালে নোবেলজয়ী কোহেনের ডিএনএ ও আরএনএ বিভাজন তত্ত্ব এবং বোয়ারের ডিএনএ ও আরএনএ বিভাজন পরবর্তী সংযোজন বিয়োজন নিশ্চিতভাবে মানুষের গড় আয়ুকে নিয়ে যেতে পারে অদূর ভবিষ্যতে শতবর্ষের উপরে। গোটা বিশ্ব তাকিয়ে আছে হার্ভার্ডসহ পৃথিবীর নামকরা সব বিশ^বিদ্যালয়ের দিকে। অনেকে বলে থাকেন মানুষ একদিন মৃত্যুকেও জয় করতে সমর্থ হবে। ভীষ্মের ইচ্ছা মৃত্যু হয়েছিল। শতাব্দীর ব্যবধানে ইচ্ছামৃত্যুই হবে মানব জীবনের শেষ মুহূর্ত।

[লেখক : আইনজীবী, আপিল বিভাগ]

back to top