এসডি সুব্রত
জন্মাষ্টমী সনাতন তথা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ত্রিগুণাতীত বিশ্ব প্রতিভূ। তিনি অষ্ট প্রকৃতির ঊর্ধ্বে। তাই কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম। দ্বাপরযুগে আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে স্বয়ং ভগবান এই ধরাধামে আবির্ভূত হন পূর্ণ অবতার রূপে। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে রোহিনী নক্ষত্র যোগে জন্মাষ্টমী পালিত হয় প্রতিবছর।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কংসের কারাগারে দেবকীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। দেবকী ও বসুদেবের অষ্টম পুত্র শ্রীকৃষ্ণের জীবন বিপদাপন্ন জেনে বাসুদেব শ্রী কৃষ্ণকে যশোদা ও নন্দের ঘরে রেখে আসেন এবং যশোদার সদ্যজাত কন্যাকে নিয়ে আসেন। যে সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কংসের কারাগারে দেবকীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন সেই মুহূর্তে তার নির্দেশে ভগবতী যোগমায়া নন্দের গৃহে যশোদা কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করেন। দ্বাপরযুগের এই দিনে পাশবিক শক্তি যখন সত্য ও ন্যায়কে গ্রাস করেছিল তখন সত্য ও ন্যায়ের পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অবতার রূপে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। কংসসহ সব অত্যাচারী রাজাদের হত্যা করেন শ্রী কৃষ্ণ। এভাবেই ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। অবতার সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন-হে অর্জুন! যিনি আমার এ অলৌকিক জন্ম ও কর্ম যথাযথভাবে বুঝেন, তিনি শরীর পরিত্যাগ করিয়া পুনর্জন্ম গ্রহণ করেন না, আমাকেই লাভ করেন।
শ্রীমদ্ভাগবত গীতায় আছে- ‘যে যথা মাং প্রপ্যদান্তে তাংস্তথৈব ভজিম্যহম। মম বর্তানুবর্তে মনুষ্য পার্থ সর্বশ : (গীতা ৪/১১)।’ অর্থাৎ যে ভক্ত আমাকে যেভাবে ভজনা করে আমি তাকে সেভাবে পুরস্কৃত করি। হে পার্থ, মানুষ সর্ব প্রকারে আমার পথ অনুসরণ করে। যুগে যুগে ভগবান ভক্তের কল্যাণে আবির্ভূত হন সব বৈরিতা ও আঁধার দূর করে ভক্তিরসে আপ্লুত করতে। শাস্ত্রে আছে, সাধকানাং হিথার্তায় ব্রহ্মণো রূপ কল্পনা। অর্থাৎ সাধকের কল্যানের জন্য তিনি রূপ ধারণ করেন এবং জগতে আসেন। ভাগবতে আছে- ‘অনুগ্রহায় ভূতানাং মানুষং দেহমাস্তিত:। / ভিজতে তাদৃশীক্রীড়া যা শ্রত্বা তৎপরো ভবেৎ।’ অর্থাৎ ভক্তের প্রতি অনুগ্রহবশত মনুষ্যদেহ ধারণ করে মানুষের মতো আচরণ করে মানবকুলকে আকৃষ্ট করেন ভগবান।
গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন-যথা যদাহি ধর্মস্য গ্লানি ভবতি ভারত/ অভ্যুত্থানম ধর্মস্য তদাত্মানাং সৃজাম্যহম /পবিত্রানায সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম/ ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যগে যুগে। অর্থাৎ পৃথিবী যে যখন ধর্মের গ্লানি ও অধর্ম বেছে যায় ভগবান তখন পৃথিবীতে আসেন দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন ও ধর্ম সংস্থাপনের লক্ষ্যে। বসুদেব যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে বৃন্দাবন যশোদার কাছে যাচ্ছিলেন, তখন আপনা আপনিই কারাগারের কপাট খুলে যায়। প্রহরীরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ আঁধার রাতে যমুনা বসুদেবকে পথ করে দিয়েছিল। শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন স্বয়ং ভগবান। শাস্ত্রে তার ছয়টি গুণের কথা বলা হয়েছে-ব্রহ্মত্ব, ভগবত্ব, আস্বাদ্য, ঐশ্বর্য ও মাধুর্য।
শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীর জীবকুলের পরম পিতা, পরম সত্তা ও পরম আত্মা। তিনি পৃথিবীতে সব অন্যায়-অবিচার দূর করে সর্বজীবে আত্মার বন্ধন তৈরি করেন। গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের মাধ্যমে আঠারটি অধ্যায়ের মাধ্যমে জগতিক জ্ঞান, কর্ম, ভক্তি, মুক্তি, মোহ, যশ, খ্যাতি সম্পর্কে বলেছেন। অর্থ-বিত্তের মায়াজাল অন্যায়-অবিচার প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞানদান করেছেন। তিনি সব প্রাণীর মধ্যে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠা করেন। জীবাত্মারূপ বাসুদেব, পরমাত্মারূপ শ্রীকৃষ্ণ ও অন্তশক্তির প্রতীক কুন্ডলিনী। এদের সমন্বিত যোগ চিত্রায়িত রূপই শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য নির্দেশ করে।
[লেখক : প্রাবন্ধিক ]
এসডি সুব্রত
বুধবার, ১৭ আগস্ট ২০২২
জন্মাষ্টমী সনাতন তথা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ত্রিগুণাতীত বিশ্ব প্রতিভূ। তিনি অষ্ট প্রকৃতির ঊর্ধ্বে। তাই কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম। দ্বাপরযুগে আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে স্বয়ং ভগবান এই ধরাধামে আবির্ভূত হন পূর্ণ অবতার রূপে। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে রোহিনী নক্ষত্র যোগে জন্মাষ্টমী পালিত হয় প্রতিবছর।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কংসের কারাগারে দেবকীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। দেবকী ও বসুদেবের অষ্টম পুত্র শ্রীকৃষ্ণের জীবন বিপদাপন্ন জেনে বাসুদেব শ্রী কৃষ্ণকে যশোদা ও নন্দের ঘরে রেখে আসেন এবং যশোদার সদ্যজাত কন্যাকে নিয়ে আসেন। যে সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কংসের কারাগারে দেবকীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন সেই মুহূর্তে তার নির্দেশে ভগবতী যোগমায়া নন্দের গৃহে যশোদা কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করেন। দ্বাপরযুগের এই দিনে পাশবিক শক্তি যখন সত্য ও ন্যায়কে গ্রাস করেছিল তখন সত্য ও ন্যায়ের পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অবতার রূপে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। কংসসহ সব অত্যাচারী রাজাদের হত্যা করেন শ্রী কৃষ্ণ। এভাবেই ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। অবতার সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন-হে অর্জুন! যিনি আমার এ অলৌকিক জন্ম ও কর্ম যথাযথভাবে বুঝেন, তিনি শরীর পরিত্যাগ করিয়া পুনর্জন্ম গ্রহণ করেন না, আমাকেই লাভ করেন।
শ্রীমদ্ভাগবত গীতায় আছে- ‘যে যথা মাং প্রপ্যদান্তে তাংস্তথৈব ভজিম্যহম। মম বর্তানুবর্তে মনুষ্য পার্থ সর্বশ : (গীতা ৪/১১)।’ অর্থাৎ যে ভক্ত আমাকে যেভাবে ভজনা করে আমি তাকে সেভাবে পুরস্কৃত করি। হে পার্থ, মানুষ সর্ব প্রকারে আমার পথ অনুসরণ করে। যুগে যুগে ভগবান ভক্তের কল্যাণে আবির্ভূত হন সব বৈরিতা ও আঁধার দূর করে ভক্তিরসে আপ্লুত করতে। শাস্ত্রে আছে, সাধকানাং হিথার্তায় ব্রহ্মণো রূপ কল্পনা। অর্থাৎ সাধকের কল্যানের জন্য তিনি রূপ ধারণ করেন এবং জগতে আসেন। ভাগবতে আছে- ‘অনুগ্রহায় ভূতানাং মানুষং দেহমাস্তিত:। / ভিজতে তাদৃশীক্রীড়া যা শ্রত্বা তৎপরো ভবেৎ।’ অর্থাৎ ভক্তের প্রতি অনুগ্রহবশত মনুষ্যদেহ ধারণ করে মানুষের মতো আচরণ করে মানবকুলকে আকৃষ্ট করেন ভগবান।
গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন-যথা যদাহি ধর্মস্য গ্লানি ভবতি ভারত/ অভ্যুত্থানম ধর্মস্য তদাত্মানাং সৃজাম্যহম /পবিত্রানায সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম/ ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যগে যুগে। অর্থাৎ পৃথিবী যে যখন ধর্মের গ্লানি ও অধর্ম বেছে যায় ভগবান তখন পৃথিবীতে আসেন দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন ও ধর্ম সংস্থাপনের লক্ষ্যে। বসুদেব যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে বৃন্দাবন যশোদার কাছে যাচ্ছিলেন, তখন আপনা আপনিই কারাগারের কপাট খুলে যায়। প্রহরীরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ আঁধার রাতে যমুনা বসুদেবকে পথ করে দিয়েছিল। শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন স্বয়ং ভগবান। শাস্ত্রে তার ছয়টি গুণের কথা বলা হয়েছে-ব্রহ্মত্ব, ভগবত্ব, আস্বাদ্য, ঐশ্বর্য ও মাধুর্য।
শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীর জীবকুলের পরম পিতা, পরম সত্তা ও পরম আত্মা। তিনি পৃথিবীতে সব অন্যায়-অবিচার দূর করে সর্বজীবে আত্মার বন্ধন তৈরি করেন। গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের মাধ্যমে আঠারটি অধ্যায়ের মাধ্যমে জগতিক জ্ঞান, কর্ম, ভক্তি, মুক্তি, মোহ, যশ, খ্যাতি সম্পর্কে বলেছেন। অর্থ-বিত্তের মায়াজাল অন্যায়-অবিচার প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞানদান করেছেন। তিনি সব প্রাণীর মধ্যে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠা করেন। জীবাত্মারূপ বাসুদেব, পরমাত্মারূপ শ্রীকৃষ্ণ ও অন্তশক্তির প্রতীক কুন্ডলিনী। এদের সমন্বিত যোগ চিত্রায়িত রূপই শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য নির্দেশ করে।
[লেখক : প্রাবন্ধিক ]