তথ্যপ্রযুক্তি যোগাযোগসহ অনেক কিছুই হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। তবে এর অপব্যবহার জীবনে সর্বনাশও ডেকে আনছে। সর্বনাশটি হলো অনলাইন জুয়া। জুয়া হলো একটি মানসিক বা আর্থিক খেলা, যেখানে মানুষ টাকা বা অন্যান্য মৌখিক বা অনলাইন মাধ্যমে টাকা লাভ করার আশায় প্রযোজ্য প্রযোজনীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
জুয়া মূলত একটি প্রতারণার ফাঁদ। তাদের এ প্রতারণার ফাঁদে প্রতিনিয়ত হাজারও মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। একবার এই ফাঁদে প্রবেশ করলে সেই প্রাচীর থেকে বের হয়ে আসা খুবই কঠিন।
বাংলাদেশে জুয়া নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এটি চলছে। অনলাইন জুয়া খেলার প্রচুর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যেখানে সাধারণ মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের মাধ্যমে জুয়া খেলার টাকা লেনদেন করছেন। এই জুয়া সাম্প্রতিক সময়ে ডিজিটাল মাধ্যমে নতুন রূপ পেয়েছে। অনলাইনে জুয়ার অ্যাপসের সহজলভ্যতা রয়েছে। যে কেউ চাইলেই সহজেই সফটওয়্যার সেটআপ করে ঘরে বসেই অ্যাকাউন্ট করে এ অনলাইনে জুয়া খেলতে পারেন।
আবার এসব অনলাইন জুয়াতে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য জুয়ার সাইটগুলো কমিশনের ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে থাকে। যেখানে ঘরে বসেই মানুষ বিভিন্ন জুয়ার অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন। এতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের কর্মকা- সম্পর্কে জানার সুযোগ থাকছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে গত এক বছরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের হিসাব বা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছে দুই কোটি ৯১ লাখ ৯৫ হাজার ৮৬৬টি। চলতি বছরের আগস্ট শেষে মোট মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ২১ কোটি ২৪ লাখ ২০ হাজার ৪৭৬। হঠাৎ এ হারে অ্যাকাউন্ট বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে অনলাইন জুয়ার কথা বলছেন অনেক গবেষক।
অনলাইন জুয়ায় আসক্ত বেশির ভাগই স্কুল, কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ তরুণ প্রজন্ম, যা আমাদের জন্য একটি অশনিসংকেত। অনলাইনে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে জুয়ার ফাঁদ পাতা হয়। লোভ দেখানো হয় এক দিনেই লাখপতি হওয়ার! এসব ফাঁদে পা দিচ্ছেন দেশের উঠতি বয়সি তরুণ, বেকার যুবকেরা। তরুণদের অনেকেই কৌতূহলবশত এ খেলা শুরু করার পরেই নেশায় পড়ে যাচ্ছেন।
প্রথমে লাভবান হয়ে পরবর্তীতে লোভে পড়ে একপর্যায়ে খোয়াচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। জুয়ার কারণে বাড়ছে পারিবারিক অশান্তি, মানুষিক বিষণœতা, দাম্পত্য জীবনে কলহ। খেলার টাকা জোগাড় করতে এলাকায় মাদকসহ বাড়ছে অপরাধ। এ সর্বনাশা অনলাইন জুয়ার নেশার বিরুদ্ধে বিপন্ন পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্র। জুয়ার ফাঁদে পা দেয়ার পর তারা পরিবার ও সমাজকে একপ্রকার জিম্মি করে ফেলে।
একটি প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছেÑ দেশের প্রায় ২৫ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে জুয়ায় আসক্ত হয়ে গেছে। অনলাইন জুয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার আরেকটি বড় কারণ হলো এসব খেলা স্বাভাবিক গেমের মতো। সেজন্য প্রকাশ্যে খেলা হলেও আশপাশের মানুষ তা বুঝতে পারেন না। জুয়ায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে খুবই সহজে এই খেলায় যুক্ত হতে পারে।
অনলাইন জুয়ায় বছরে পাচার ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদ পাচার হচ্ছে। অনলাইন জুয়ার এ সামাজিক আগ্রাসন বন্ধ করা অপরিহার্য।
নাফিউল ইকবাল
বুধবার, ০৬ মার্চ ২০২৪
তথ্যপ্রযুক্তি যোগাযোগসহ অনেক কিছুই হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। তবে এর অপব্যবহার জীবনে সর্বনাশও ডেকে আনছে। সর্বনাশটি হলো অনলাইন জুয়া। জুয়া হলো একটি মানসিক বা আর্থিক খেলা, যেখানে মানুষ টাকা বা অন্যান্য মৌখিক বা অনলাইন মাধ্যমে টাকা লাভ করার আশায় প্রযোজ্য প্রযোজনীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
জুয়া মূলত একটি প্রতারণার ফাঁদ। তাদের এ প্রতারণার ফাঁদে প্রতিনিয়ত হাজারও মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। একবার এই ফাঁদে প্রবেশ করলে সেই প্রাচীর থেকে বের হয়ে আসা খুবই কঠিন।
বাংলাদেশে জুয়া নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এটি চলছে। অনলাইন জুয়া খেলার প্রচুর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যেখানে সাধারণ মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের মাধ্যমে জুয়া খেলার টাকা লেনদেন করছেন। এই জুয়া সাম্প্রতিক সময়ে ডিজিটাল মাধ্যমে নতুন রূপ পেয়েছে। অনলাইনে জুয়ার অ্যাপসের সহজলভ্যতা রয়েছে। যে কেউ চাইলেই সহজেই সফটওয়্যার সেটআপ করে ঘরে বসেই অ্যাকাউন্ট করে এ অনলাইনে জুয়া খেলতে পারেন।
আবার এসব অনলাইন জুয়াতে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য জুয়ার সাইটগুলো কমিশনের ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে থাকে। যেখানে ঘরে বসেই মানুষ বিভিন্ন জুয়ার অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন। এতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের কর্মকা- সম্পর্কে জানার সুযোগ থাকছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে গত এক বছরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের হিসাব বা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছে দুই কোটি ৯১ লাখ ৯৫ হাজার ৮৬৬টি। চলতি বছরের আগস্ট শেষে মোট মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ২১ কোটি ২৪ লাখ ২০ হাজার ৪৭৬। হঠাৎ এ হারে অ্যাকাউন্ট বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে অনলাইন জুয়ার কথা বলছেন অনেক গবেষক।
অনলাইন জুয়ায় আসক্ত বেশির ভাগই স্কুল, কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ তরুণ প্রজন্ম, যা আমাদের জন্য একটি অশনিসংকেত। অনলাইনে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে জুয়ার ফাঁদ পাতা হয়। লোভ দেখানো হয় এক দিনেই লাখপতি হওয়ার! এসব ফাঁদে পা দিচ্ছেন দেশের উঠতি বয়সি তরুণ, বেকার যুবকেরা। তরুণদের অনেকেই কৌতূহলবশত এ খেলা শুরু করার পরেই নেশায় পড়ে যাচ্ছেন।
প্রথমে লাভবান হয়ে পরবর্তীতে লোভে পড়ে একপর্যায়ে খোয়াচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। জুয়ার কারণে বাড়ছে পারিবারিক অশান্তি, মানুষিক বিষণœতা, দাম্পত্য জীবনে কলহ। খেলার টাকা জোগাড় করতে এলাকায় মাদকসহ বাড়ছে অপরাধ। এ সর্বনাশা অনলাইন জুয়ার নেশার বিরুদ্ধে বিপন্ন পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্র। জুয়ার ফাঁদে পা দেয়ার পর তারা পরিবার ও সমাজকে একপ্রকার জিম্মি করে ফেলে।
একটি প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছেÑ দেশের প্রায় ২৫ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে জুয়ায় আসক্ত হয়ে গেছে। অনলাইন জুয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার আরেকটি বড় কারণ হলো এসব খেলা স্বাভাবিক গেমের মতো। সেজন্য প্রকাশ্যে খেলা হলেও আশপাশের মানুষ তা বুঝতে পারেন না। জুয়ায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে খুবই সহজে এই খেলায় যুক্ত হতে পারে।
অনলাইন জুয়ায় বছরে পাচার ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদ পাচার হচ্ছে। অনলাইন জুয়ার এ সামাজিক আগ্রাসন বন্ধ করা অপরিহার্য।
নাফিউল ইকবাল