দোয়া বখশ শেখ
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তামাক মানবদেহের জন্য একটি ক্ষতিকর পদার্থ। তামাক মহামারি বিশ্বের সবচেয়ে বড় জনস্বাস্থ্য হুমকিগুলোর মধ্যে একটি। শুধু জনস্বাস্থ্যই নয়, দেশের অর্থনীতি ও পরিবেশের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশ্বের সর্বোচ্চ তামাক ব্যবহারকারী ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। গ্লোবাল এডাল্ট টোবাকো সার্ভে ২০১৭ অনুসারে এ দেশে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে ৩৫% প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাকজাত দ্রব্য (ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন) ব্যবহার করে। তামাক ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১৬১০০০ মানুষ মৃত্যুবরণ করে এবং প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জনের মৃত্যুর জন্য দায়ী তামাক (WHO-2018)।
তামাকের ভয়াবহতার কথা উপলব্ধির কারণেই বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্যের ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে এফসিটিসিতে প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে তারই ধারাবাহিকতায় এ চুক্তিকে ২০০৪ সালে অনুসমর্থন করে এবং এফসিটিসির অলোকে ধূমপান ও ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩) এবং ২০১৫ সালে বিধিমালা প্রণয়ন করে। আইন অনুযায়ী পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ ও সতর্কতামূলক নোটিশ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক ছাড়াও তামাকজাত দ্রব্যের সব ধরনের বিজ্ঞাপন, প্রচার-প্রচারণাসহ ১৮ বছরের বা তার নিচে অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুদের কাছে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তা সত্ত্বেও তামাকদ্রব্য বিপণনে কোম্পানিগুলো নানা কূটকৌশল ও প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। এদের মূল লক্ষ্য হলো দীর্ঘমেয়াদি একটি বাজার সৃষ্টি করা। কৌশল হিসেবে বর্তমান ভোক্তাদের অবস্থান ঠিক রেখে অনাগত ভবিষ্যতের জন্য নতুন প্রজন্মের যুব-কিশোরদের মধ্যে ধূমপায়ী সৃষ্টি করা। এজন্য দরকার তামাক পণ্যের সহজলভ্যতা। সহজলভ্যতা তখনই সম্ভব যখন পণ্যটি অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে সর্বত্রই পাওয়া যায়। যেহেতু তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় ও বিপণন নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশে কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই এবং তামাকজাত দ্রব্য বিক্রেতাদের ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণেরও কোন ব্যবস্থা নেই; সে কারণেই হকারসহ প্রায় সব ধরনের ট্রেড লাইসেন্সভুক্ত পণ্যের দোকানে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রের পাশে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় হতে দেখা যায়। এমনকি বই ও ওষুধের দোকানেও সিগারেট বিক্রয় হয়। শুধুমাত্র আইন প্রণয়ন ও তার প্রয়োগের মাধ্যমে আইনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধিত হয় না যদি না জনসম্পৃক্ততা থাকে।
তাই আইনের পাশাপাশি দরকার জনসচেতনতা। মানুষকে তামাক বিমুখতাকরণের অন্যতম অন্তরায় এ সহজলভ্যতা, কারণ নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। তাই দরকার এ সহজলভ্যতাকে কমিয়ে আনা এবং বিভিন্ন প্রলুব্ধকর ও প্রতারণামূলক প্রচারণা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। লাইসেন্সিং পদ্ধতি যত্রতত্র তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিয়ন্ত্রণে একটি কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে। আর এ কাজে বিশেষত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন- ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি করপোরেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিষয়টি উপলব্ধি করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে সম্পৃক্তকরণে যে- ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন নির্দেশিকা’ প্রণয়ন ও অনুমোদন করেছে; এটা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তাছাড়া আওতাধীন নাগরিকদের স্বাস্থ্য রক্ষা করা ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি করপোরেশনের দায়িত্বগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ইতোমধ্যে তামাক কোম্পানিগুলো তাদের সর্বশক্তি নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে নির্দেশিকাটি বাস্তবায়নের বিপক্ষে। পুঁজিপতি এ কোম্পানিগুলোর একমাত্র লক্ষ্য মুনাফা অর্জন, মানুষের জীবন এখানে তুচ্ছ। কিন্তু দেশের সচেতন মহল ও সরকার তাদের এ উদ্যোগ সফল হতে দেবে না বলে আমাদের বিশ্বাস। দেশপ্রেমিক ও সচেতন জনগণ তামাক কোম্পানির এ অপচেষ্টার বিরুদ্ধে উদাসীন থাকতে পারে না, দেশ ও আগামী প্রজন্মের স্বার্থে তারা অবশ্যই রুখে দাঁড়াবে। রোগমুক্ত সুস্বাস্থ্যের অধিকারী সুন্দর আগামী প্রজন্মের স্বপ্ন দেখতে চাই, সেই প্রতীক্ষায় রইলাম।
[লেখক : উন্নয়ন কর্মী]
দোয়া বখশ শেখ
বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২১
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তামাক মানবদেহের জন্য একটি ক্ষতিকর পদার্থ। তামাক মহামারি বিশ্বের সবচেয়ে বড় জনস্বাস্থ্য হুমকিগুলোর মধ্যে একটি। শুধু জনস্বাস্থ্যই নয়, দেশের অর্থনীতি ও পরিবেশের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশ্বের সর্বোচ্চ তামাক ব্যবহারকারী ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। গ্লোবাল এডাল্ট টোবাকো সার্ভে ২০১৭ অনুসারে এ দেশে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে ৩৫% প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাকজাত দ্রব্য (ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন) ব্যবহার করে। তামাক ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১৬১০০০ মানুষ মৃত্যুবরণ করে এবং প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জনের মৃত্যুর জন্য দায়ী তামাক (WHO-2018)।
তামাকের ভয়াবহতার কথা উপলব্ধির কারণেই বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্যের ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে এফসিটিসিতে প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে তারই ধারাবাহিকতায় এ চুক্তিকে ২০০৪ সালে অনুসমর্থন করে এবং এফসিটিসির অলোকে ধূমপান ও ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩) এবং ২০১৫ সালে বিধিমালা প্রণয়ন করে। আইন অনুযায়ী পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ ও সতর্কতামূলক নোটিশ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক ছাড়াও তামাকজাত দ্রব্যের সব ধরনের বিজ্ঞাপন, প্রচার-প্রচারণাসহ ১৮ বছরের বা তার নিচে অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুদের কাছে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তা সত্ত্বেও তামাকদ্রব্য বিপণনে কোম্পানিগুলো নানা কূটকৌশল ও প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। এদের মূল লক্ষ্য হলো দীর্ঘমেয়াদি একটি বাজার সৃষ্টি করা। কৌশল হিসেবে বর্তমান ভোক্তাদের অবস্থান ঠিক রেখে অনাগত ভবিষ্যতের জন্য নতুন প্রজন্মের যুব-কিশোরদের মধ্যে ধূমপায়ী সৃষ্টি করা। এজন্য দরকার তামাক পণ্যের সহজলভ্যতা। সহজলভ্যতা তখনই সম্ভব যখন পণ্যটি অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে সর্বত্রই পাওয়া যায়। যেহেতু তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় ও বিপণন নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশে কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই এবং তামাকজাত দ্রব্য বিক্রেতাদের ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণেরও কোন ব্যবস্থা নেই; সে কারণেই হকারসহ প্রায় সব ধরনের ট্রেড লাইসেন্সভুক্ত পণ্যের দোকানে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রের পাশে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় হতে দেখা যায়। এমনকি বই ও ওষুধের দোকানেও সিগারেট বিক্রয় হয়। শুধুমাত্র আইন প্রণয়ন ও তার প্রয়োগের মাধ্যমে আইনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধিত হয় না যদি না জনসম্পৃক্ততা থাকে।
তাই আইনের পাশাপাশি দরকার জনসচেতনতা। মানুষকে তামাক বিমুখতাকরণের অন্যতম অন্তরায় এ সহজলভ্যতা, কারণ নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। তাই দরকার এ সহজলভ্যতাকে কমিয়ে আনা এবং বিভিন্ন প্রলুব্ধকর ও প্রতারণামূলক প্রচারণা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। লাইসেন্সিং পদ্ধতি যত্রতত্র তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিয়ন্ত্রণে একটি কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে। আর এ কাজে বিশেষত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন- ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি করপোরেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিষয়টি উপলব্ধি করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে সম্পৃক্তকরণে যে- ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন নির্দেশিকা’ প্রণয়ন ও অনুমোদন করেছে; এটা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তাছাড়া আওতাধীন নাগরিকদের স্বাস্থ্য রক্ষা করা ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি করপোরেশনের দায়িত্বগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ইতোমধ্যে তামাক কোম্পানিগুলো তাদের সর্বশক্তি নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে নির্দেশিকাটি বাস্তবায়নের বিপক্ষে। পুঁজিপতি এ কোম্পানিগুলোর একমাত্র লক্ষ্য মুনাফা অর্জন, মানুষের জীবন এখানে তুচ্ছ। কিন্তু দেশের সচেতন মহল ও সরকার তাদের এ উদ্যোগ সফল হতে দেবে না বলে আমাদের বিশ্বাস। দেশপ্রেমিক ও সচেতন জনগণ তামাক কোম্পানির এ অপচেষ্টার বিরুদ্ধে উদাসীন থাকতে পারে না, দেশ ও আগামী প্রজন্মের স্বার্থে তারা অবশ্যই রুখে দাঁড়াবে। রোগমুক্ত সুস্বাস্থ্যের অধিকারী সুন্দর আগামী প্রজন্মের স্বপ্ন দেখতে চাই, সেই প্রতীক্ষায় রইলাম।
[লেখক : উন্নয়ন কর্মী]