alt

উপ-সম্পাদকীয়

কৃষি-উদ্যোক্তা হতে করণীয়

জামাল উদ্দিন

: বুধবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১
image

উদ্যোক্তা হওয়ার বাসনা মনের গভীরে অনেকে লালন করেন। কৃষিতে উদ্যোক্তা হতে অনেকের ইদানীং বেশ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। যিনি নতুন কোন ব্যবসা নিয়ে চিন্তা করেন যা আগে কেউ করেননি অথবা পুরোনো কোন ব্যবসাকে নতুন রূপে নিয়ে এসে মানুষের আগ্রহ বা চাহিদা সৃষ্টি করতে পারেন সহজ কথায় তিনিই উদ্যোক্তা। কৃষির উদ্যোক্তা হলো কৃষিপণ্য নিয়ে ব্যবসা করাকে বোঝায়। এক সময় কৃষি ছিল একটি অসম্মানজনক পেশা। তখন কৃষিকে ক্রমাবনতিশীল পেশা হিসাবে ধরা হতো। একটু শিক্ষিত হলেই লোক লজ্জার ভয়ে এ কাজ থেকে দূরে থাকতে চাইতো। কিন্তু সে যুগ আর নেই। যুগের পরিবর্তনে কৃষির অভাবনীয় সাফল্যে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের সুবাদে সেই সব এখন পৌরাণিক গল্পের মতোই। এখন কৃষিতে ঝুঁকছে এমএ পাস ছেলেরা। সে সময় গ্রামের একজন ছেলে বিএ পাস মানে অনেক কিছু। তার কদরও সে রকম ছিল। এখন ঘরে ঘরে বিএ পাস, এমএ পাশ। কৃষিও এখন তাদের কাছে সম্মানজনক পেশা হিসেবে উঁকি দিচ্ছে! শুধু প্রয়োজন নিজের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। যারা পারছে তারা সফল হচ্ছে। এ রকম সফলতার গল্প বলে শেষ করা যাবে না। কৃষির অভাবনীয় সাফল্যে দিন দিন শিক্ষিত তরুণ কৃষি পেশাকে সাদরে গ্রহণ করছে। প্রযুক্তির প্রসারে এ কাজ করা বর্তমানে সহজও বটে। কৃষিপণ্য আমদানি-রপ্তানি করেও অনেক তরুণ নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেছে।

ইদানীং রীতিমতো উচ্চ শিক্ষিত ও স্মার্ট ছেলেরা অফিসে হানা দিচ্ছে কি করে একটি ফলের বাণিজ্যিক বাগান করা যায় তার পরামর্শ নিতে। শুধু একা আসে না। আসে দুই চার বন্ধু মিলে। সবাই এ মহৎ পেশায় নিজেদের আত্ম-নিয়োগ করতে চায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথার সঙ্গে সূর মিলিয়ে তারাও বলতে চায় আমরা চাকরি খুঁজবো না, চাকরি দেব। বাস্তবে দিচ্ছেও তাই। চারিপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বহু উদ্যমী শিক্ষিত তরুন। প্রয়োজন তাদের উদ্ভুদ্ধ করা, সাহস জোগানো আর সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা, প্রণোদনার ব্যবস্থা করা। তারা সুযোগ পেলে সত্যিই সত্যিই সোনার বাংলাকে সোনায় ভরে দিতে পারে। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার উদ্যোক্তা শ্রেণী তৈরির ওপর বেশ জোর দিচ্ছে। নারী উদ্যোক্তার প্রতি বিশেষ নজর তো আছেই! তবে কৃষিতে নতুনভাবে উদ্যোক্তা হতে চাইলে বেশকিছু বিষয় মেনে চলা উচিত। যেমন ইচ্ছে ও আকাঙ্খা থাকতে হবে, সাহসী হতে হবে, ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা থাকতে হবে, আর্থিকভাবে সচ্ছল না হলেও আর্থিক ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করার ইচ্ছে থাকাসহ ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের নৈতিক গুণাবলি থাকতে হবে। সফল ও ভালো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে নিজের মেধা ও উদ্ভাবনীশক্তি কাজে লাগিয়ে আরো ভালো কিছু করার জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকতে হবে। এককভাবে সম্ভব না হলে সমমনা বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে এ কাজে নামতে পারে।

কৃষি গবেষণা ও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা গ্রহণ করতে পারে। বর্তমানে ইউটিউব ও অনলাইন চ্যানেলে অনেক সফল উদ্যোক্তাদের গল্প হরহামেশাই দেখা যাচ্ছে। সেখান থেকেও ধারনা নেয়া যেতে পারে। জানার জন্য যত উৎস আছে সব বিশ্লেষণ করে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে এ কাজে নেমে পড়তে পারে। এ কাজে ঝুঁকি থাকবেই। ঝুঁকি মোকাবিলা করার উপায় বের করতে হবে। দেশে বর্তমানে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার চাকরির জন্য হণ্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বছরের পর পর সময় নষ্ট হচ্ছে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা শেষ হলে হতাশায় ভুগছে। যারা চাকরি পাচ্ছে তারা ভাগ্যবান। তাই বলে নিজেকে হতাশায় নিমজ্জিত না রেখে নিজেই উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগটি গ্রহণ করায় শ্রেয়। এ ব্যাপারে সরকারের সহায়তার হাতও বেশ প্রসারিত। শুধু অনুসন্ধান দরকার, দরকার সৎ ইচ্ছে ও একাগ্রতা। বর্তমানে কৃষিতে অনলাইন ব্যবসাও বেশ জমজমাট। কে কোন ধরনের কাজে উদ্যোক্তা হবে সেটা তার পছন্দের ওপর নির্ভরশীল। দেশের বর্তমান কৃষি বৈশ্বিক কৃষির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভ্যালু এডেড এগ্রিকালচার এর দিকে ঝুঁকছে। বাগান করার মতো নিজের জায়গা না থাকলে কয়েক বন্ধু মিলে জমি বর্গা নিয়ে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং করে শুরু করতে পারে। কৃষির অন্য এন্টারপ্রাইজ নিয়েও ভাবা যেতে পারে। প্রক্রিয়াজাত পণ্য নিয়ে অন-লাইন ব্যবসা শুরু করা যায়। দেশের কৃষি গবেষণা ও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রক্রিয়াজাতকরণ বিষয়ে আরও বেশি মনোনিবেশ হওয়া জরুরি।

সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট শুধু কাঁঠাল থেকে প্রায় ১০-১২ রকমের প্রক্রিয়াজাত পণ্য উদ্ভাবন করেছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের অনেক প্রযুক্তি রয়েছে। বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে ছোট আকারে এসব প্রযুক্তি গ্রহণ করে অনলাইন ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। বান্দরবানে ব্রিটিশ-আমেরিকার টোব্যাকো কোম্পানির চাকরি ছেড়ে দিয়ে তারেক ও তোহা নামে দুজন উচ্চশিক্ষিত যুবক ছোট আকারে কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাতকারী কারখানা গড়ে তুলেছে। সাফল্যের মুখ ও দেখা শুরু করেছে। তাদের কারখানায় কাজ করে অনেকের পরিবার চলছে। তারা আগে একা চাকরি করত এখন অন্যদেরও চাকরি দিচ্ছে। সরকারিভাবে কৃষি বিভাগ থেকে আর্থিকভাবে সহায়তাও মিলছে। একসময় হয়ত তারা কাজুবাদাম বিদেশে রপ্তানি করে মাথা উঁচু করে সমাজে দাঁড়িয়ে যাবে। ভিয়েতনামে দেখেছি এক অজপাড়া গ্রামের এক শিক্ষিত যুবক কোন এক ফলের বীজ থেকে বোতাম বানিয়ে সে দেশের সরকারের নজর কেড়ে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় রাতারাতি বোতাম তৈরির বড় উদ্যোক্তা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উদ্যোক্তা হতে হলে নিজের ইচ্ছের পাশাপাশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও জরুরি। দেশে কৃষির অনেক উদ্ভাবন ও আবিষ্কার রয়েছে। কৃষির এ নব নব আবিষ্কার ও উদ্ভাবনকে কাজে লাগিয়ে নিজের মেধা খাটিয়ে শিক্ষিত প্রজন্ম এ আধুনিক কৃষি পেশায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করে নিজে বাঁচবে, অপরকে বাঁচাবে সে সঙ্গে একজন সফল উদ্যোক্ত হিসেবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সমৃদ্ধির দিকে সে প্রত্যাশা করছি।

[লেখক : জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সাবেক ন্যাশনাল কনসালটেন্ট; ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম]

চিকিৎসা জগতের বাতিঘর জন হপকিনস বিশ^বিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও আজকের বাংলাদেশ

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

tab

উপ-সম্পাদকীয়

কৃষি-উদ্যোক্তা হতে করণীয়

জামাল উদ্দিন

image

বুধবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

উদ্যোক্তা হওয়ার বাসনা মনের গভীরে অনেকে লালন করেন। কৃষিতে উদ্যোক্তা হতে অনেকের ইদানীং বেশ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। যিনি নতুন কোন ব্যবসা নিয়ে চিন্তা করেন যা আগে কেউ করেননি অথবা পুরোনো কোন ব্যবসাকে নতুন রূপে নিয়ে এসে মানুষের আগ্রহ বা চাহিদা সৃষ্টি করতে পারেন সহজ কথায় তিনিই উদ্যোক্তা। কৃষির উদ্যোক্তা হলো কৃষিপণ্য নিয়ে ব্যবসা করাকে বোঝায়। এক সময় কৃষি ছিল একটি অসম্মানজনক পেশা। তখন কৃষিকে ক্রমাবনতিশীল পেশা হিসাবে ধরা হতো। একটু শিক্ষিত হলেই লোক লজ্জার ভয়ে এ কাজ থেকে দূরে থাকতে চাইতো। কিন্তু সে যুগ আর নেই। যুগের পরিবর্তনে কৃষির অভাবনীয় সাফল্যে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের সুবাদে সেই সব এখন পৌরাণিক গল্পের মতোই। এখন কৃষিতে ঝুঁকছে এমএ পাস ছেলেরা। সে সময় গ্রামের একজন ছেলে বিএ পাস মানে অনেক কিছু। তার কদরও সে রকম ছিল। এখন ঘরে ঘরে বিএ পাস, এমএ পাশ। কৃষিও এখন তাদের কাছে সম্মানজনক পেশা হিসেবে উঁকি দিচ্ছে! শুধু প্রয়োজন নিজের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। যারা পারছে তারা সফল হচ্ছে। এ রকম সফলতার গল্প বলে শেষ করা যাবে না। কৃষির অভাবনীয় সাফল্যে দিন দিন শিক্ষিত তরুণ কৃষি পেশাকে সাদরে গ্রহণ করছে। প্রযুক্তির প্রসারে এ কাজ করা বর্তমানে সহজও বটে। কৃষিপণ্য আমদানি-রপ্তানি করেও অনেক তরুণ নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেছে।

ইদানীং রীতিমতো উচ্চ শিক্ষিত ও স্মার্ট ছেলেরা অফিসে হানা দিচ্ছে কি করে একটি ফলের বাণিজ্যিক বাগান করা যায় তার পরামর্শ নিতে। শুধু একা আসে না। আসে দুই চার বন্ধু মিলে। সবাই এ মহৎ পেশায় নিজেদের আত্ম-নিয়োগ করতে চায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথার সঙ্গে সূর মিলিয়ে তারাও বলতে চায় আমরা চাকরি খুঁজবো না, চাকরি দেব। বাস্তবে দিচ্ছেও তাই। চারিপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বহু উদ্যমী শিক্ষিত তরুন। প্রয়োজন তাদের উদ্ভুদ্ধ করা, সাহস জোগানো আর সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা, প্রণোদনার ব্যবস্থা করা। তারা সুযোগ পেলে সত্যিই সত্যিই সোনার বাংলাকে সোনায় ভরে দিতে পারে। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার উদ্যোক্তা শ্রেণী তৈরির ওপর বেশ জোর দিচ্ছে। নারী উদ্যোক্তার প্রতি বিশেষ নজর তো আছেই! তবে কৃষিতে নতুনভাবে উদ্যোক্তা হতে চাইলে বেশকিছু বিষয় মেনে চলা উচিত। যেমন ইচ্ছে ও আকাঙ্খা থাকতে হবে, সাহসী হতে হবে, ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা থাকতে হবে, আর্থিকভাবে সচ্ছল না হলেও আর্থিক ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করার ইচ্ছে থাকাসহ ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের নৈতিক গুণাবলি থাকতে হবে। সফল ও ভালো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে নিজের মেধা ও উদ্ভাবনীশক্তি কাজে লাগিয়ে আরো ভালো কিছু করার জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকতে হবে। এককভাবে সম্ভব না হলে সমমনা বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে এ কাজে নামতে পারে।

কৃষি গবেষণা ও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা গ্রহণ করতে পারে। বর্তমানে ইউটিউব ও অনলাইন চ্যানেলে অনেক সফল উদ্যোক্তাদের গল্প হরহামেশাই দেখা যাচ্ছে। সেখান থেকেও ধারনা নেয়া যেতে পারে। জানার জন্য যত উৎস আছে সব বিশ্লেষণ করে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে এ কাজে নেমে পড়তে পারে। এ কাজে ঝুঁকি থাকবেই। ঝুঁকি মোকাবিলা করার উপায় বের করতে হবে। দেশে বর্তমানে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার চাকরির জন্য হণ্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বছরের পর পর সময় নষ্ট হচ্ছে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা শেষ হলে হতাশায় ভুগছে। যারা চাকরি পাচ্ছে তারা ভাগ্যবান। তাই বলে নিজেকে হতাশায় নিমজ্জিত না রেখে নিজেই উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগটি গ্রহণ করায় শ্রেয়। এ ব্যাপারে সরকারের সহায়তার হাতও বেশ প্রসারিত। শুধু অনুসন্ধান দরকার, দরকার সৎ ইচ্ছে ও একাগ্রতা। বর্তমানে কৃষিতে অনলাইন ব্যবসাও বেশ জমজমাট। কে কোন ধরনের কাজে উদ্যোক্তা হবে সেটা তার পছন্দের ওপর নির্ভরশীল। দেশের বর্তমান কৃষি বৈশ্বিক কৃষির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভ্যালু এডেড এগ্রিকালচার এর দিকে ঝুঁকছে। বাগান করার মতো নিজের জায়গা না থাকলে কয়েক বন্ধু মিলে জমি বর্গা নিয়ে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং করে শুরু করতে পারে। কৃষির অন্য এন্টারপ্রাইজ নিয়েও ভাবা যেতে পারে। প্রক্রিয়াজাত পণ্য নিয়ে অন-লাইন ব্যবসা শুরু করা যায়। দেশের কৃষি গবেষণা ও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রক্রিয়াজাতকরণ বিষয়ে আরও বেশি মনোনিবেশ হওয়া জরুরি।

সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট শুধু কাঁঠাল থেকে প্রায় ১০-১২ রকমের প্রক্রিয়াজাত পণ্য উদ্ভাবন করেছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের অনেক প্রযুক্তি রয়েছে। বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে ছোট আকারে এসব প্রযুক্তি গ্রহণ করে অনলাইন ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। বান্দরবানে ব্রিটিশ-আমেরিকার টোব্যাকো কোম্পানির চাকরি ছেড়ে দিয়ে তারেক ও তোহা নামে দুজন উচ্চশিক্ষিত যুবক ছোট আকারে কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাতকারী কারখানা গড়ে তুলেছে। সাফল্যের মুখ ও দেখা শুরু করেছে। তাদের কারখানায় কাজ করে অনেকের পরিবার চলছে। তারা আগে একা চাকরি করত এখন অন্যদেরও চাকরি দিচ্ছে। সরকারিভাবে কৃষি বিভাগ থেকে আর্থিকভাবে সহায়তাও মিলছে। একসময় হয়ত তারা কাজুবাদাম বিদেশে রপ্তানি করে মাথা উঁচু করে সমাজে দাঁড়িয়ে যাবে। ভিয়েতনামে দেখেছি এক অজপাড়া গ্রামের এক শিক্ষিত যুবক কোন এক ফলের বীজ থেকে বোতাম বানিয়ে সে দেশের সরকারের নজর কেড়ে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় রাতারাতি বোতাম তৈরির বড় উদ্যোক্তা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উদ্যোক্তা হতে হলে নিজের ইচ্ছের পাশাপাশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও জরুরি। দেশে কৃষির অনেক উদ্ভাবন ও আবিষ্কার রয়েছে। কৃষির এ নব নব আবিষ্কার ও উদ্ভাবনকে কাজে লাগিয়ে নিজের মেধা খাটিয়ে শিক্ষিত প্রজন্ম এ আধুনিক কৃষি পেশায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করে নিজে বাঁচবে, অপরকে বাঁচাবে সে সঙ্গে একজন সফল উদ্যোক্ত হিসেবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সমৃদ্ধির দিকে সে প্রত্যাশা করছি।

[লেখক : জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সাবেক ন্যাশনাল কনসালটেন্ট; ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম]

back to top