alt

উপ-সম্পাদকীয়

বোনেরা প্রাপ্য অংশ থেকে বঞ্চিত হলে কী করবেন?

সিরাজ প্রামাণিক

: বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

আমাদের সমাজে একটি ভ্রান্তধারণা প্রচলিত রয়েছে- বোনেরা বাবার পৈতৃক ভিটার অংশ পায় না; আবার বাপের বাড়ির সম্পত্তির ভাগ নিলে স্বামীর সংসারে অভাব-অনটন নেমে আসে। আবার অনেকে বলে থাকেন ভাইদের সঙ্গে বোনদের সম্পর্কের অবনতি এবং বোনেরা ভাইদের বাড়িতে এবং ছেলেমেয়েরা মামার বাড়িতে যাওয়ার অধিকার বঞ্চিত হয়। ভাইয়েরা বোনকে ফাঁকি দিয়ে পৈতৃক সম্পত্তি ভাগাভাগি করে ভোগদখল করলে যদি অভিশপ্ত না হয়, সম্পর্ক অবনতি না হয়, তো বোনদের অপরাধ কোথায়?

বোনদের প্রাপ্য সম্পত্তি ভাই ভোগদখল করবে, ফুফুর সম্পত্তি ভাইপো ভোগদখল করবে, তাতে অপরাধ হবে না, অথচ পিতামাতার সম্পত্তির বৈধ অংশ কন্যা ভোগদখল করলেই ‘অভিশপ্ত’ হবে। প্রকৃতপক্ষে মেয়েদের স্থায়ীভাবে ঠকানোর এগুলো একটি চতুর কৌশল ছাড়া আর কিছুই না। শুধু বোনের প্রাপ্ত অংশই নয়, যদি কোন বোন তার স্বামীর অব্যাহত অত্যাচারে ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয়, তাহলে ভাই ভরণপোষণ দেবে। জোর করে বোনের ভরণপোষণের ভয়ে উপযুক্ত সুরাহা ছাড়া ওই স্বামীর বাড়িতে পৌঁছে দেবে না। কাজেই বোনের উত্তরাধিকার সম্পত্তি গ্রাস করা যাবে না। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন- ‘আত্মীয়স্বজনকে তার অধিকার দিয়ে দাও...।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৬)। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কারো উত্তরাধিকার সম্পত্তি গ্রাস করে, যে ব্যক্তি কারো উত্তরাধিকারী সম্পত্তি নিয়ে পলায়ন করে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের অংশ থেকে বঞ্চিত করবেন।’

একটি উদাহরণ দিলেই আজকের আলোচ্য বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। রহিমরা চার ভাই ও এক বোন। রহিমের বাবা মারা গেছেন। তার মা বেঁচে আছেন। এখন রহিমরা চার ভাই মিলে বাবার সম্পত্তি নিজেদের নামে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। ভাইয়েরা কিছুতেই বোনকে বাবার সম্পত্তির অংশ দিতে চাচ্ছেন না। এখন বোন কী করবেন?

মুসলিম আইনে বাবা অথবা মা মারা গেলে মৃত ব্যক্তির যদি ছেলে এবং মেয়ে উভয়ই থাকে তাহলে রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে ছেলেরা যা পাবেন, মেয়ে বা মেয়েরা তার অর্ধেক পাবেন। অর্থাৎ ভাইয়েরা ইচ্ছা করলেই বোনদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে বোনের বিয়ে হোক বা না হোক, সেটি বিবেচ্য নয়। এক্ষেত্রে বঞ্চিত বোনেরা বাটোয়ারা বা বণ্টনের মোকদ্দমা করতে পারেন। মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তির ভাগ-বণ্টন নিয়ে উত্তরাধিকারীদের নিজেদের মধ্যে বনিবনা না হলে- বাটোয়ারা মামলা করে অধিকার ফিরে পাওয়া যায়। এ মোকদ্দমা চলাকালে কেউ মারা গেলে তাদের উত্তরাধিকারীরা অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন এবং অংশ চাইতে পারেন। অর্থাৎ শুধু বোনেরা নন, বোনেরা মারা যাওয়ার পর তার উত্তরাধিকারীরাও এ মামলায় পক্ষ হতে পারেন।

এ মামলায় দুইবার ডিক্রি হয়। প্রাথমিক ডিক্রি হওয়ার পরে বা আগে নিজেদের মধ্যে নির্ধারিত সময়ে আপস-মীমাংসা করে নেওয়ার সুযোগ আছে। প্রাথমিক ডিক্রির পর বণ্টন না করা হলে আদালত অ্যাডভোকেট কমিশনার নিয়োগ করে অংশ নির্ধারণ করে দিতে পারেন এবং চূড়ান্ত ডিক্রি প্রদান করেন। এছাড়া বোনদের ভয়-ভীতি ও হুমকি দেয়া হলে সংশ্লিষ্ট ও নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা যেতে পারে। ভয়ভীতি-হুমকি ও জীবননাশের আশঙ্কায় আদালতে ফৌজদারি মামলাও করা যায়।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

চিকিৎসা জগতের বাতিঘর জন হপকিনস বিশ^বিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও আজকের বাংলাদেশ

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বোনেরা প্রাপ্য অংশ থেকে বঞ্চিত হলে কী করবেন?

সিরাজ প্রামাণিক

বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

আমাদের সমাজে একটি ভ্রান্তধারণা প্রচলিত রয়েছে- বোনেরা বাবার পৈতৃক ভিটার অংশ পায় না; আবার বাপের বাড়ির সম্পত্তির ভাগ নিলে স্বামীর সংসারে অভাব-অনটন নেমে আসে। আবার অনেকে বলে থাকেন ভাইদের সঙ্গে বোনদের সম্পর্কের অবনতি এবং বোনেরা ভাইদের বাড়িতে এবং ছেলেমেয়েরা মামার বাড়িতে যাওয়ার অধিকার বঞ্চিত হয়। ভাইয়েরা বোনকে ফাঁকি দিয়ে পৈতৃক সম্পত্তি ভাগাভাগি করে ভোগদখল করলে যদি অভিশপ্ত না হয়, সম্পর্ক অবনতি না হয়, তো বোনদের অপরাধ কোথায়?

বোনদের প্রাপ্য সম্পত্তি ভাই ভোগদখল করবে, ফুফুর সম্পত্তি ভাইপো ভোগদখল করবে, তাতে অপরাধ হবে না, অথচ পিতামাতার সম্পত্তির বৈধ অংশ কন্যা ভোগদখল করলেই ‘অভিশপ্ত’ হবে। প্রকৃতপক্ষে মেয়েদের স্থায়ীভাবে ঠকানোর এগুলো একটি চতুর কৌশল ছাড়া আর কিছুই না। শুধু বোনের প্রাপ্ত অংশই নয়, যদি কোন বোন তার স্বামীর অব্যাহত অত্যাচারে ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয়, তাহলে ভাই ভরণপোষণ দেবে। জোর করে বোনের ভরণপোষণের ভয়ে উপযুক্ত সুরাহা ছাড়া ওই স্বামীর বাড়িতে পৌঁছে দেবে না। কাজেই বোনের উত্তরাধিকার সম্পত্তি গ্রাস করা যাবে না। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন- ‘আত্মীয়স্বজনকে তার অধিকার দিয়ে দাও...।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৬)। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কারো উত্তরাধিকার সম্পত্তি গ্রাস করে, যে ব্যক্তি কারো উত্তরাধিকারী সম্পত্তি নিয়ে পলায়ন করে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের অংশ থেকে বঞ্চিত করবেন।’

একটি উদাহরণ দিলেই আজকের আলোচ্য বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। রহিমরা চার ভাই ও এক বোন। রহিমের বাবা মারা গেছেন। তার মা বেঁচে আছেন। এখন রহিমরা চার ভাই মিলে বাবার সম্পত্তি নিজেদের নামে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। ভাইয়েরা কিছুতেই বোনকে বাবার সম্পত্তির অংশ দিতে চাচ্ছেন না। এখন বোন কী করবেন?

মুসলিম আইনে বাবা অথবা মা মারা গেলে মৃত ব্যক্তির যদি ছেলে এবং মেয়ে উভয়ই থাকে তাহলে রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে ছেলেরা যা পাবেন, মেয়ে বা মেয়েরা তার অর্ধেক পাবেন। অর্থাৎ ভাইয়েরা ইচ্ছা করলেই বোনদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে বোনের বিয়ে হোক বা না হোক, সেটি বিবেচ্য নয়। এক্ষেত্রে বঞ্চিত বোনেরা বাটোয়ারা বা বণ্টনের মোকদ্দমা করতে পারেন। মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তির ভাগ-বণ্টন নিয়ে উত্তরাধিকারীদের নিজেদের মধ্যে বনিবনা না হলে- বাটোয়ারা মামলা করে অধিকার ফিরে পাওয়া যায়। এ মোকদ্দমা চলাকালে কেউ মারা গেলে তাদের উত্তরাধিকারীরা অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন এবং অংশ চাইতে পারেন। অর্থাৎ শুধু বোনেরা নন, বোনেরা মারা যাওয়ার পর তার উত্তরাধিকারীরাও এ মামলায় পক্ষ হতে পারেন।

এ মামলায় দুইবার ডিক্রি হয়। প্রাথমিক ডিক্রি হওয়ার পরে বা আগে নিজেদের মধ্যে নির্ধারিত সময়ে আপস-মীমাংসা করে নেওয়ার সুযোগ আছে। প্রাথমিক ডিক্রির পর বণ্টন না করা হলে আদালত অ্যাডভোকেট কমিশনার নিয়োগ করে অংশ নির্ধারণ করে দিতে পারেন এবং চূড়ান্ত ডিক্রি প্রদান করেন। এছাড়া বোনদের ভয়-ভীতি ও হুমকি দেয়া হলে সংশ্লিষ্ট ও নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা যেতে পারে। ভয়ভীতি-হুমকি ও জীবননাশের আশঙ্কায় আদালতে ফৌজদারি মামলাও করা যায়।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

back to top