alt

উপ-সম্পাদকীয়

বিমানবন্দরে পিসিআর ল্যাব স্থাপন প্রসঙ্গে

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

: শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে করোনা পরীক্ষার নিমিত্তে আরটি-পিসিআর ল্যাব বসাতে অনুমোদন দেয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ল্যাব বসানোর কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। ২৪টি প্রতিষ্ঠান পিসিআর ল্যাব বসানোর আবেদন করে, প্রস্তাবিত দর ও অন্যান্য শর্তাদি বিবেচনা করে ৭টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয়া হয়। ৭টি প্রতিষ্ঠানের উদ্ধৃত দর ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় বেসরকারি এই সব ল্যাবে প্রবাসী ও বিদেশগামীরা সর্বনিম্ন এক হাজার ৭০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৩০০ টাকায় করোনা টেস্ট পরীক্ষা করাতে পারবেন; এক্ষেত্রে নতুন করে অভিন্ন ফি নির্ধারণের সম্ভাবনাও রয়েছে। ফ্লাইটে ওঠার ৬ ঘণ্টার মধ্যে এই পরীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে। যাত্রার ৭২ ঘণ্টা আগে পিসিআর পরীক্ষার ফলাফল দেয়ার ব্যবস্থা অনেক পূর্ব থেকে অনুসৃত হচ্ছিল, পাশ্চাত্যসহ অধিকাংশ দেশ তা গ্রহণও করছে; তবে সৌদি আরব ৪৮ ঘণ্টার বিধান করায় নতুন জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশ বিমান উড্ডয়নের ৬ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে পিসিআর টেস্টের সনদ চেয়েছে। তাদের শর্তের গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই, কারণ সৌদি আরবের পরই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।

আগস্ট মাসের ৪ তারিখে আরব আমিরাত এই শর্তারোপ করে; ২৯ আগস্ট বিমানবন্দরে ল্যাব বসাতে আগ্রহ প্রকাশ করে একটি প্রতিষ্ঠান তাদের প্রস্তাবনা জমা দেয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু ল্যাব স্থাপন নিয়ে সরকারের তরফ থেকে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। দেখা যাচ্ছে, পুরো আগস্ট মাসে নীতিনির্ধারক কারও কানে আমিরাতের শর্তারোপের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ঢুকেনি। কেন বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করা হলো না- তার জবাবদিহিতা আদায় করার কেউ নেই। বিমানবন্দরে ল্যাব স্থাপনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনীহা ছিল বলে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশি প্রবাসীরা বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার নিমিত্তে ল্যাব বসানোর ব্যবস্থা নিতে বারবার আবেদন-নিবেদন করেছেন, অনশন করেছেন, সংবাদ সম্মেলন করেছেন, কিন্তু কারো টনক নড়েনি। জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ড সম্পাদনের জন্য দাবি করে প্রবাসীদের আন্দোলন, মিছিল কেন করতে হলো? প্রকৃতপক্ষে আন্দোলন, মিছিল, ভাঙচুর ছাড়া বাংলাদেশে কিছু হয় বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আরেকটি বিষয়ে সবাই উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, প্রধানমন্ত্রী না বললে এদেশের কোন মন্ত্রণালয়ে কোন জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ কাজও হয় না।

আমাদের দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এই পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ সেপ্টেম্বর জরুরি ভিত্তিতে করোনা সংক্রমণ শনাক্তকরণের আরটিপিসিআর টেস্ট চালুর নির্দেশ দেন; কিন্তু তার নির্দেশনা ত্বরিৎ পরিপালনের কোন তোড়জোড় পরিলক্ষিত হয়নি। বিমানবন্দরে বেসরকারিভাবে পিসিআর ল্যাব স্থাপন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে সেপ্টেম্বরের ১৪ তারিখে একটি বৈঠক হয় এবং উক্ত বৈঠকের পরামর্শ মোতাবেক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কারিগরি পরামর্শক কমিটির অনুষ্ঠিত বৈঠকে সাতটি ল্যাব চূড়ান্ত করা হয়। ল্যাব নির্বাচন চূড়ান্ত হওয়ার পরও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা থাকায় ল্যাব স্থাপন বিলম্বিত হচ্ছে; কারণ ৭টি প্রতিষ্ঠানকে ল্যাব বসানোর জন্য পর্যাপ্ত উপযোগী জায়গা দেয়া বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এখন অগত্যা বিমানবন্দরের উত্তর পাশের বহুতল কার পার্কিং ভবনের ছাদে ল্যাব স্থাপনের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। জায়গা দেয়া হলেও ল্যাবের জন্য কক্ষ নির্মাণ করতে, বিমানবন্দরের বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদির ব্যবহার বাওখানকার স্পেস ভাড়া ইত্যাদির মীমাংসা করতে সময় লাগবে। গত বুধবারে ৪৬ জন যাত্রীকে ভ্রাম্যমাণ পরীক্ষাগারে টেস্ট করে দুবাই পাঠানো হয়েছে, দুবাই বিমানবন্দরে দুবাই কর্তৃপক্ষ এই ৪৬ জন যাত্রীকে পুনরায় পরীক্ষা করবে, তাদের পরীক্ষার ফলাফল আমাদের বিমানবন্দরের পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হলে তাদের বিমানবন্দর থেকে বের হতে দেবে এবং আমাদের বিমানবন্দরে আমাদের প্রস্তাবমত ল্যাব স্থাপনের অনাপত্তিও পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশের কিছুতেই বিদেশিদের আস্থা নেই। আস্থা থাকার কথাও নয়, কারণ ভুয়া করোনা রিপোর্ট নিয়ে বাঙালি যাত্রীকে দক্ষিণ কোরিয়ার বিমানবন্দর থেকে ফেরত আসতে হয়েছে, দুটি প্রতিষ্ঠান হতে শত শত ভুয়া করোনার রিপোর্ট ইস্যু করার কথা মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে, ওজন বাড়ানোর জন্য চিংড়ি মাছে পেরেক ঢুকানো হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই বোধ হয় সংযুক্ত আরব আমিরাত স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে, যারা বিমানবন্দরে ল্যাব বসাবে তাদের স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্ল্যান অর্থাৎ নমুনা পরীক্ষার প্রক্রিয়া, মেশিনের নাম ও ল্যাবের কাজের প্রক্রিয়া সম্পর্কিত তথ্য জানিয়ে তাদের কাছ থেকে আগাম অনাপত্তি নিতে হবে। ৭টি প্রতিষ্ঠানের ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর জমা দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে অনাপত্তি নিতেও সময় লাগবে। এখানেও একটি বিস্ময় রয়েছে, ৭টি প্রতিষ্ঠান নির্বাচনকালীন এই ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্ল্যান সম্পর্কে সরকারের তরফ থেকে কিছু বলা না হলেও একটি প্রতিষ্ঠান তা তৈরি করে রেখেছিল। তাহলে কি কোন তরফ থেকে শুধু ঐ প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত সুবিধা দেয়ার জন্য অবহিত করা হয়েছিল? সরকার যদি আগে থেকেই বিষয়টি জেনে থাকে তা গোপন করে সময় নষ্ট করল কেন? শুধু আরব আমিরাতের নয়, মেশিন বসানোর আগে অনাপত্তিপত্র ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে নেয়ারও বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সময়মতো ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে এখন নানা প্রতিবন্ধকতায় সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।

শুধু করোনার টিকার ক্ষেত্রে নয়, বিভিন্নভাবে আমাদের দেশের লোকদের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণে হেনস্তা হতে হয়। পৃথিবীর বহু দেশের করোনার পরিস্থিতি আমাদের চেয়েও খারাপ, অথচ সেই দেশগুলোর লোকদের এভাবে বিমানবন্দরে করোনা টেস্ট করার প্রয়োজন হয় না। ব্রিটেনও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘রেড এলার্ট’ জারি করে রেখেছে, অথচ ভারতের করোনা পরিস্থিতি আমাদের চেয়েও খারাপ, ভারতের জন্য কোন রেড এলার্ট নেই। চীনের সিনো আর্মের টিকা যারা নিয়েছেন তাদেরও সৌদি আরব ঢুকতে দিচ্ছে না; তাদের শর্ত হচ্ছে, যারা সিনোফার্মের টিকা নিয়েছেন তাদের সৌদি আরবে ঢুকতে গেলে অ্যাস্ট্রাজেনিকা, ফাইজার বা মডার্নার টিকার বুস্টার ডোজনিতে হবে। এমন অবাস্তব ও অবৈজ্ঞানিক শর্তের বিরোধিতা করাও আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না; দুটি কোম্পানির টিকার মিশ্রণ করা আদৌ সমীচীন কি না-সে ব্যাপারে এখনও কোন গবেষণাই হয়নি।

বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার সুবিধা না থাকায় আরব আমিরাত বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট বন্ধ করেদিয়েছিল। আরব আমিরাতের শর্ত পূরণ করে পাকিস্তান এবং ভারত বিমানবন্দরে ল্যাব বসিয়ে লোক পাঠানো শুরু করেছে অনেক আগে, কিন্তু বাংলাদেশকে প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ল্যাব বসানো হলে এত সমস্যায় পড়তে হতো না। বিগত ১৫ দিন ধরে আগের মতো করোনা রোগীর চাপ নেই, এই অবস্থায় বিমানবন্দরে স্থাপনের জন্য বিদ্যমান পিসিআর মেশিন, কিট, টেকনিকাল স্টাফ থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী জোগান দেয়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য কঠিন হতো বলে মনে হয় না। বাংলাদেশে কোন কাজ ত্বরিৎ গতিতে হয় না।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আরেকটি বিষয়ে সবাই উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, প্রধানমন্ত্রী না বললে এদেশের কোন মন্ত্রণালয়ে কোন জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ কাজও হয় না

আমাকে লন্ডনের একটি সেমিনারে যোগ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মনোনয়ন দিয়ে সরকারের অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কয়েকটি তাগাদাপত্র দিয়ে কোন উত্তর না পাওয়ায় আমি আমার মেজো ভাই মহিউদ্দিন আহমদকে মনোনয়নের কথাটি অবহিত করি। অর্থ সচিব ড. আকবর আলী আমার ভাইয়ের ব্যাচমেট, ভাইয়ের অনুরোধে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলাম, কিন্তু তত দিনে সেমিনার শেষ। বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়া অফিসের মহাব্যবস্থাপক থাকাকালীন ২০০৬ সনেএকটি বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তের জন্য আমাকে প্রধান কার্যালয়ে একটি চিঠি লিখে ১৪টি তাগাদাপত্র দিতে হয়েছিল, তারপরও উত্তর পাইনি। অবশ্য দ্রুত কাজ করলেও বিপদ; বিভিন্ন সময়ে দেশে অবরোধ ও হরতালের কারণে আমাকে প্রায়ই ছুটির দিনে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির মিটিং করতে হতো; বাণিজ্যিক অডিটের আপত্তি হচ্ছে, ‘অসৎ উদ্দেশ্যে কাউকে দ্রুত কাজ দেয়ার অভিপ্রায়ে শুক্রবারে বন্ধের দিন মিটিং করা হয়েছে’। এমন অভিযোগ ডান্ডি ডাইয়িং প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রেও উঠেছিল। দ্রুত ও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকেও সরকারের নিরীক্ষা বিভাগ এবং মিডিয়া প্রশ্নবিদ্ধ করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে বস্তুগত উন্নয়ন হলেও মানসিকতার উন্নয়ন হচ্ছে না।

[লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক]

ahmedzeauddin0@gmail.com

চিকিৎসা জগতের বাতিঘর জন হপকিনস বিশ^বিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও আজকের বাংলাদেশ

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বিমানবন্দরে পিসিআর ল্যাব স্থাপন প্রসঙ্গে

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে করোনা পরীক্ষার নিমিত্তে আরটি-পিসিআর ল্যাব বসাতে অনুমোদন দেয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ল্যাব বসানোর কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। ২৪টি প্রতিষ্ঠান পিসিআর ল্যাব বসানোর আবেদন করে, প্রস্তাবিত দর ও অন্যান্য শর্তাদি বিবেচনা করে ৭টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয়া হয়। ৭টি প্রতিষ্ঠানের উদ্ধৃত দর ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় বেসরকারি এই সব ল্যাবে প্রবাসী ও বিদেশগামীরা সর্বনিম্ন এক হাজার ৭০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৩০০ টাকায় করোনা টেস্ট পরীক্ষা করাতে পারবেন; এক্ষেত্রে নতুন করে অভিন্ন ফি নির্ধারণের সম্ভাবনাও রয়েছে। ফ্লাইটে ওঠার ৬ ঘণ্টার মধ্যে এই পরীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে। যাত্রার ৭২ ঘণ্টা আগে পিসিআর পরীক্ষার ফলাফল দেয়ার ব্যবস্থা অনেক পূর্ব থেকে অনুসৃত হচ্ছিল, পাশ্চাত্যসহ অধিকাংশ দেশ তা গ্রহণও করছে; তবে সৌদি আরব ৪৮ ঘণ্টার বিধান করায় নতুন জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশ বিমান উড্ডয়নের ৬ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে পিসিআর টেস্টের সনদ চেয়েছে। তাদের শর্তের গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই, কারণ সৌদি আরবের পরই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।

আগস্ট মাসের ৪ তারিখে আরব আমিরাত এই শর্তারোপ করে; ২৯ আগস্ট বিমানবন্দরে ল্যাব বসাতে আগ্রহ প্রকাশ করে একটি প্রতিষ্ঠান তাদের প্রস্তাবনা জমা দেয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু ল্যাব স্থাপন নিয়ে সরকারের তরফ থেকে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। দেখা যাচ্ছে, পুরো আগস্ট মাসে নীতিনির্ধারক কারও কানে আমিরাতের শর্তারোপের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ঢুকেনি। কেন বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করা হলো না- তার জবাবদিহিতা আদায় করার কেউ নেই। বিমানবন্দরে ল্যাব স্থাপনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনীহা ছিল বলে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশি প্রবাসীরা বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার নিমিত্তে ল্যাব বসানোর ব্যবস্থা নিতে বারবার আবেদন-নিবেদন করেছেন, অনশন করেছেন, সংবাদ সম্মেলন করেছেন, কিন্তু কারো টনক নড়েনি। জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ড সম্পাদনের জন্য দাবি করে প্রবাসীদের আন্দোলন, মিছিল কেন করতে হলো? প্রকৃতপক্ষে আন্দোলন, মিছিল, ভাঙচুর ছাড়া বাংলাদেশে কিছু হয় বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আরেকটি বিষয়ে সবাই উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, প্রধানমন্ত্রী না বললে এদেশের কোন মন্ত্রণালয়ে কোন জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ কাজও হয় না।

আমাদের দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এই পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ সেপ্টেম্বর জরুরি ভিত্তিতে করোনা সংক্রমণ শনাক্তকরণের আরটিপিসিআর টেস্ট চালুর নির্দেশ দেন; কিন্তু তার নির্দেশনা ত্বরিৎ পরিপালনের কোন তোড়জোড় পরিলক্ষিত হয়নি। বিমানবন্দরে বেসরকারিভাবে পিসিআর ল্যাব স্থাপন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে সেপ্টেম্বরের ১৪ তারিখে একটি বৈঠক হয় এবং উক্ত বৈঠকের পরামর্শ মোতাবেক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কারিগরি পরামর্শক কমিটির অনুষ্ঠিত বৈঠকে সাতটি ল্যাব চূড়ান্ত করা হয়। ল্যাব নির্বাচন চূড়ান্ত হওয়ার পরও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা থাকায় ল্যাব স্থাপন বিলম্বিত হচ্ছে; কারণ ৭টি প্রতিষ্ঠানকে ল্যাব বসানোর জন্য পর্যাপ্ত উপযোগী জায়গা দেয়া বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এখন অগত্যা বিমানবন্দরের উত্তর পাশের বহুতল কার পার্কিং ভবনের ছাদে ল্যাব স্থাপনের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। জায়গা দেয়া হলেও ল্যাবের জন্য কক্ষ নির্মাণ করতে, বিমানবন্দরের বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদির ব্যবহার বাওখানকার স্পেস ভাড়া ইত্যাদির মীমাংসা করতে সময় লাগবে। গত বুধবারে ৪৬ জন যাত্রীকে ভ্রাম্যমাণ পরীক্ষাগারে টেস্ট করে দুবাই পাঠানো হয়েছে, দুবাই বিমানবন্দরে দুবাই কর্তৃপক্ষ এই ৪৬ জন যাত্রীকে পুনরায় পরীক্ষা করবে, তাদের পরীক্ষার ফলাফল আমাদের বিমানবন্দরের পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হলে তাদের বিমানবন্দর থেকে বের হতে দেবে এবং আমাদের বিমানবন্দরে আমাদের প্রস্তাবমত ল্যাব স্থাপনের অনাপত্তিও পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশের কিছুতেই বিদেশিদের আস্থা নেই। আস্থা থাকার কথাও নয়, কারণ ভুয়া করোনা রিপোর্ট নিয়ে বাঙালি যাত্রীকে দক্ষিণ কোরিয়ার বিমানবন্দর থেকে ফেরত আসতে হয়েছে, দুটি প্রতিষ্ঠান হতে শত শত ভুয়া করোনার রিপোর্ট ইস্যু করার কথা মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে, ওজন বাড়ানোর জন্য চিংড়ি মাছে পেরেক ঢুকানো হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই বোধ হয় সংযুক্ত আরব আমিরাত স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে, যারা বিমানবন্দরে ল্যাব বসাবে তাদের স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্ল্যান অর্থাৎ নমুনা পরীক্ষার প্রক্রিয়া, মেশিনের নাম ও ল্যাবের কাজের প্রক্রিয়া সম্পর্কিত তথ্য জানিয়ে তাদের কাছ থেকে আগাম অনাপত্তি নিতে হবে। ৭টি প্রতিষ্ঠানের ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর জমা দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে অনাপত্তি নিতেও সময় লাগবে। এখানেও একটি বিস্ময় রয়েছে, ৭টি প্রতিষ্ঠান নির্বাচনকালীন এই ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্ল্যান সম্পর্কে সরকারের তরফ থেকে কিছু বলা না হলেও একটি প্রতিষ্ঠান তা তৈরি করে রেখেছিল। তাহলে কি কোন তরফ থেকে শুধু ঐ প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত সুবিধা দেয়ার জন্য অবহিত করা হয়েছিল? সরকার যদি আগে থেকেই বিষয়টি জেনে থাকে তা গোপন করে সময় নষ্ট করল কেন? শুধু আরব আমিরাতের নয়, মেশিন বসানোর আগে অনাপত্তিপত্র ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে নেয়ারও বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সময়মতো ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে এখন নানা প্রতিবন্ধকতায় সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।

শুধু করোনার টিকার ক্ষেত্রে নয়, বিভিন্নভাবে আমাদের দেশের লোকদের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণে হেনস্তা হতে হয়। পৃথিবীর বহু দেশের করোনার পরিস্থিতি আমাদের চেয়েও খারাপ, অথচ সেই দেশগুলোর লোকদের এভাবে বিমানবন্দরে করোনা টেস্ট করার প্রয়োজন হয় না। ব্রিটেনও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘রেড এলার্ট’ জারি করে রেখেছে, অথচ ভারতের করোনা পরিস্থিতি আমাদের চেয়েও খারাপ, ভারতের জন্য কোন রেড এলার্ট নেই। চীনের সিনো আর্মের টিকা যারা নিয়েছেন তাদেরও সৌদি আরব ঢুকতে দিচ্ছে না; তাদের শর্ত হচ্ছে, যারা সিনোফার্মের টিকা নিয়েছেন তাদের সৌদি আরবে ঢুকতে গেলে অ্যাস্ট্রাজেনিকা, ফাইজার বা মডার্নার টিকার বুস্টার ডোজনিতে হবে। এমন অবাস্তব ও অবৈজ্ঞানিক শর্তের বিরোধিতা করাও আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না; দুটি কোম্পানির টিকার মিশ্রণ করা আদৌ সমীচীন কি না-সে ব্যাপারে এখনও কোন গবেষণাই হয়নি।

বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার সুবিধা না থাকায় আরব আমিরাত বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট বন্ধ করেদিয়েছিল। আরব আমিরাতের শর্ত পূরণ করে পাকিস্তান এবং ভারত বিমানবন্দরে ল্যাব বসিয়ে লোক পাঠানো শুরু করেছে অনেক আগে, কিন্তু বাংলাদেশকে প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ল্যাব বসানো হলে এত সমস্যায় পড়তে হতো না। বিগত ১৫ দিন ধরে আগের মতো করোনা রোগীর চাপ নেই, এই অবস্থায় বিমানবন্দরে স্থাপনের জন্য বিদ্যমান পিসিআর মেশিন, কিট, টেকনিকাল স্টাফ থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী জোগান দেয়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য কঠিন হতো বলে মনে হয় না। বাংলাদেশে কোন কাজ ত্বরিৎ গতিতে হয় না।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আরেকটি বিষয়ে সবাই উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, প্রধানমন্ত্রী না বললে এদেশের কোন মন্ত্রণালয়ে কোন জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ কাজও হয় না

আমাকে লন্ডনের একটি সেমিনারে যোগ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মনোনয়ন দিয়ে সরকারের অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কয়েকটি তাগাদাপত্র দিয়ে কোন উত্তর না পাওয়ায় আমি আমার মেজো ভাই মহিউদ্দিন আহমদকে মনোনয়নের কথাটি অবহিত করি। অর্থ সচিব ড. আকবর আলী আমার ভাইয়ের ব্যাচমেট, ভাইয়ের অনুরোধে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলাম, কিন্তু তত দিনে সেমিনার শেষ। বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়া অফিসের মহাব্যবস্থাপক থাকাকালীন ২০০৬ সনেএকটি বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তের জন্য আমাকে প্রধান কার্যালয়ে একটি চিঠি লিখে ১৪টি তাগাদাপত্র দিতে হয়েছিল, তারপরও উত্তর পাইনি। অবশ্য দ্রুত কাজ করলেও বিপদ; বিভিন্ন সময়ে দেশে অবরোধ ও হরতালের কারণে আমাকে প্রায়ই ছুটির দিনে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির মিটিং করতে হতো; বাণিজ্যিক অডিটের আপত্তি হচ্ছে, ‘অসৎ উদ্দেশ্যে কাউকে দ্রুত কাজ দেয়ার অভিপ্রায়ে শুক্রবারে বন্ধের দিন মিটিং করা হয়েছে’। এমন অভিযোগ ডান্ডি ডাইয়িং প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রেও উঠেছিল। দ্রুত ও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকেও সরকারের নিরীক্ষা বিভাগ এবং মিডিয়া প্রশ্নবিদ্ধ করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে বস্তুগত উন্নয়ন হলেও মানসিকতার উন্নয়ন হচ্ছে না।

[লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক]

ahmedzeauddin0@gmail.com

back to top