alt

উপ-সম্পাদকীয়

ভূলণ্ঠিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি

সজীব ওয়াফি

: শনিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২১

এ ভূখন্ডে বাঙালি সাংস্কৃতিক সম্প্রীতি হাজার বছরের পুরোনো। হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে সকলের বসবাস। ধর্মীয়ভাবে কেউ কারো প্রতিযোগী নয়, সহযোগী মাত্র। হিন্দু ময়রার তৈরি করা জিলাপিতে মসজিদে মিলাদ-মাহফিল হয়, ইসলামি জলসা হয়; তাতে কারো ধর্মের একচুল পরিমাণ খোয়া যায়নি। আবার মুসলমানদের হাতে তৈরি কাঁসার ঘটি-বাটি ব্যবহারে পুজোতেও কোনদিন অসুবিধা সৃষ্টি হয়নি। দুর্গাপূজার নাড়ু-সন্দেশ খেতে না পারলে মুসলমান বন্ধুরা যেমন অভিমান করে; ঠিক তেমনি ঈদের সময়ে সেমাই-পায়েস খাওয়ার দাওয়াত না দিলে হিন্দু বন্ধু মুসলমান বন্ধুর কাছে হাস্যোজ্বল অভিযোগ করে। গলাগলি করে বেড়ে উঠতে থাকে একে অপরের মান-অভিমান। মাঝে মধ্যেই ভেতরে প্রবেশ করে স্বার্থান্বেষী মহল। তৈরি হয় সামাজিক অস্থিরতা।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। দুর্গাপূজা কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মীয় সম্প্রীতি ভেঙে খানখান হয়েছে। পুজোর অষ্টমীর দিনে কুমিল্লার নানুয়া দীঘির পাড়ে পূজা মন্ডপে প্রদর্শনী হিসেবে রাখা হনুমান দেবতার কোলে ইসলামের সর্বোচ্চ ধর্মীয়গ্রন্থ রাখার অভিযোগ আসে। তৈরি হয় হৈ-হট্টগোল। কুমিল্লাসহ সারাদেশে হামলা করে ভেঙে ফেলা হয় অগুনিত মন্ডপ। অনাকাক্সিক্ষত সাম্প্রদায়িক আগুন জ্বলে উঠে সারাদেশে। নোয়াখালী, রংপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, গাইবান্ধা, সিলেটে ঘটে সাম্প্রদায়িক হামলার ন্যক্কারজনক বিভৎস ঘটনা। এর ভেতরে রংপুরের মাঝিপাড়ায় হিন্দুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ-লুটপাট সম্প্রীতি নষ্টে ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। অভিযোগ আছে-চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে নিয়ন্ত্রণ নিতে গেলে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন আহত-নিহত হওয়ার।

কোন প্রকৃত সনাতন ধর্মাবলম্বী মন্ডপে পবিত্র কোরআন রাখতে যায়নি। নিজেদের সম্পদায়ের ওপর মৌলবাদী আক্রমণ আসতে পারে এ রকম আচরণ তারা পূর্বে কখনোই করেননি এবং ভবিষ্যতেও করবেন না বলে বিশ্বাস আছে। অন্যদিকে কোন প্রকৃত মুসলমান কোরআন শরিফ মন্দিরে নিয়ে গিয়ে দুর্গা উৎসব পন্ড করার ধৃষ্টতা দেখাবেন না; কারণ ইসলামেই এ ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। অথচ এটা নিয়েই হাঙ্গামা লাগলো, সঙ্গে যোগ হয়েছে নানা দিকের নানা গুজব। ঐতিহাসিক বিশ্লেষণে- আমাদের এ ভূখন্ডে যতবারই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভূলণ্ঠিত হয়েছে, ততবারই রাজনৈতিক নানা সমীকরণ সামনে এসেছে। অর্থাৎ মন্ডপে কোরআন রেখে অবমাননার অভিযোগ তুলে প্রতিমা ভাঙচুর, হিন্দুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ-লুটপাটে স্বার্থান্বেষী মহল যে জড়িত এটা দিনের মতো স্পষ্ট।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস অবস্থা। মোটা চালের দাম পৌঁছেছে প্রায় ষাট টাকার কাছাকাছি। বেড়েছে সিলিন্ডার গ্যাসের দাম। শাক সবজির বাজারে আগুন। খরচ বাঁচাতে সাধারণ মানুষের খাওয়া-দাওয়া কমাতে হচ্ছে। বাজারে গিয়ে ভাবতে হচ্ছে কি কিনবেন আর কি কিনবেন না। আগামী নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়েও সরকারিবিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছিল। দেশের ৫৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের ন্যায় নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের আইন করার উল্লেখ করেছেন। সরকার জানিয়েছে আগের মতোই সার্চ কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। বিশিষ্টজনদের পদক্ষেপের এই কারণ নির্বাচন কমিশন স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও আজ্ঞাবহ ভাবমূর্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে। যার অন্যতম নজির- দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে একটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধনের নির্দেশ কমিশনকে দেয়া হয়েছিল, দলটি নিবন্ধনের সমস্ত শর্ত পূরণ করলেও অজানা কারণে কমিশন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অতঃপর আদালতের হস্তক্ষেপে রায়ের চিঠি পাওয়ার ৩০ কর্ম দিবসের ভেতরেই কমিশন থেকে নিবন্ধন দেয়ার কথা, কিন্তু তৎপরবর্তী প্রায় তিন বছর অতিক্রম হতে চললেও ইসি কোন ধরনের ভূমিকা রাখেনি। নির্বাচন কমিশন আজ্ঞাবহ এবং আদালত অবমাননা করেছে কাগজে কলমে এটা প্রমাণ করার জন্য ওই রাজনৈতিক দল পুনরায় উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন মহামারী রূপে বেড়েছে, আছে ভোটারদের ভোট না দিতে পারার অভিযোগ। আস্থা এবং চ্যালেঞ্জের মুখে পরেছে নির্বাচন কমিশন। জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এ সব গণতান্ত্রিক সংকটগুলোর জোরেশোরে হল্লা তুলেছিল।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি শক্তিশালী অবস্থানে যেতে এখন পর্যন্ত দুর্বল। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা ঘটলে সেখানে বিজেপির শক্ত ঘাঁটি তৈরিতে সহায়ক হয়। ৩০ অক্টোবরে বিধান সভার একটি উপনির্বাচন সামনে রেখে বিজেপি প্রতিনিধি শুভেন্দু অধিকারী ইতোমধ্যে বলেছেনও যে, ‘বাংলাদেশের ঘটনায় আরও তিনগুণ বেশি ভোটে জিতব।’ অর্থাৎ একদিকে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির রাজনীতি শক্তিশালী করণের আকাক্সক্ষা, অন্যদিকে বাংলাদেশের উদ্ভূত পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে কুমিল্লা লাগোয়া ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগত নির্বাচনী লাভের ছক তো আছেই। আছে বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিল বাস্তবায়ন অঙ্কের হিসাব।

করোনা প্রাদুর্ভাব স্থিতিশীল পরবর্তী চাকরির বাজারে একের পর এক দুর্নীতি ধরা পরছে। সামনে এসেছে করোনায় তরুণদের বয়সজনিত সমস্যা। তার উপরে সমন্বয়হীনতায় ২০-২৫টা পরীক্ষা একেই দিনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আইনতঃ সব প্রার্থী পরীক্ষায় বসার অধিকার রাখে। সেখানে একসঙ্গে একেই দিনে অনেক পরীক্ষা হওয়ায় তরুণদের মাঝে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। দায়িত্বশীল বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলেও ছাত্রদের সমাধান হয়নি। বরং একজন বেকারের বহুল আকাক্সিক্ষত বিসিএস পরীক্ষার মতো দিনেও রাখা হয়েছে একাধিক পরীক্ষা। ছাত্র আন্দোলন গুছিয়ে উঠতেছিল প্রায়। দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, নির্বাচন কমিশনে আস্থার সংকট, বেকারত্বে তরুণদের হতাশায় চারিদিকে জনরোষ তৈরি হয়েছে এ রকম সময়েই সারাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলায় অস্থির হয়ে উঠল। বিষাক্ত ছোবলে তলিয়ে গেল মানুষের অধিকারের মিছিল।

হিন্দু ময়রার তৈরি করা জিলাপিতে মসজিদে

মিলাদ-মাহফিল হয়, ইসলামি জলসা হয়; তাতে কারো ধর্মের একচুল পরিমাণ খোয়া যায়নি। আবার মুসলমানদের হাতে তৈরি কাঁসার ঘটি-বাটি ব্যবহারে পুজোতেও কোনদিন অসুবিধা সৃষ্টি হয়নি

বিগত ২০ বছরে বাংলাদেশ অসংখ্যবার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। গত ১২ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হামলায় হামলায় সংখ্যালঘুরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরেছেন। সবচেয়ে বড় মানসিক আঘাতটা এলো এবারের দুর্গাপূজায়। সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি-মন্দিরে হামলার বিচারের আওতায় আনতে সব সরকারই অনিহা দেখিয়েছে। রামুতে বৌদ্ধ পল্লীতে হামলার বিচার হয়নি, বিচার হয়নি যশোরের অভয়নগরে জেলে পল্লীতে হামলারও, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হামলার বিচার পাওয়ার সম্ভাবনাও শূন্য। অত্যন্ত বিস্ময়কর যে সরকার না ঘুরতেই নাসিরনগর হামলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে অভিযুক্ত তিনজনকে আওয়ামী লীগ সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনে নমিনেশন দিয়ে পুরস্কৃত করেছে। অধিকন্তু নাগরিক তদন্তে এবং নির্যাতিতদের বয়ানে দেখা গেছে এই সব হামলার সঙ্গে কোন না কোনভাবে সরকারদলীয় প্রভাবশালীরা জড়িত। ফলে সাময়িক চাঞ্চল্য তৈরি হলেও প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। সত্যি বলতে বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি কি নতুন করে হামলার প্রেক্ষাপট উসকে দেয়নি? ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা কি নিরাপত্তার অভাববোধ করে নিজ ভূমি ত্যাগ করেননি! নতুবা স্বাধীনতা-পরবর্তী যেখানে জনসংখ্যার ১৩.৫% হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন, সেখানে এখন ৮% এ নামলো কি করে? কি করে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েও সংখ্যালঘু সংখ্যার পতন ঘটল!

মহা-অষ্টমীর দিনে কুমিল্লার ঘটনা দৃষ্টিগোচর হয় সকালে। সময় অতিবাহিত হলেও সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়া হয়নি, অল্পতে সমাধান করা সম্ভব হলেও তার কোন চেষ্টা প্রশাসন থেকে হয়নি। সেই সুযোগটাই মৌলবাদীরা নিয়েছে। নিরাপত্তা প্রদানের সদিচ্ছাই যদি থাকবে, তবে কুমিল্লার ঘটনার পরেও সারাদেশে কীভাবে পূজামন্ডপগুলো অনিরাপদ হয়ে পড়ল? যেখানে সারাদেশে পাড়া-মহল্লায় ওয়ার্ড পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দলীয় কমিটি আছে, সেখানে কি করে স্বার্থান্বেষী মহল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে? রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার তার আওতায় ঘটনা নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন, ফলে তার কপালে বদলি জুটেছে! অথচ এই লেখার সময় পর্যন্ত কুমিল্লা, নোয়াখালী বা চাঁদপুরে কিন্তু কারো বদলির ঘটনা ঘটেনি। দ্বিতীয়ত সাত দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ইকবাল নামের একজন কে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফুটেজে ইকবাল নামের ওই ব্যক্তির আচরণ অত্যন্ত পরিকল্পিত ঘটনার ইঙ্গিত দেয়। পেছনে বৃহৎ শক্তি না থাকলে এত বড় ঘটনা ঘটানো অসম্ভব। সুতরাং পর্দার আড়ালে প্রভাবশালী মহলের ইঙ্গিত আছে এটা পরিষ্কার। উত্তেজনা প্রশমিত করতে কেন দ্রুত ঘটনার বিস্তারিত উদ্ঘাটন করা হলো না? প্রভাবশালীদের পাড় পাইয়ে দিতেই এবং সারাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রান্ত বৃদ্ধি করতেই কি নাটকীয় আয়োজন? দ্রব্যমূল্য-নির্বাচন কমিশনের আলাপ চাপা দিতেই নতুন ইস্যু সৃষ্টির প্রয়োজন হয়েছিল? নাকি মৌলবাদীরা দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘাপটি মেরে আছে? খাপটি মেরে থাকলে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া দাবিদার দল আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকেও কেন মৌলবাদীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি অথবা মূল ধারার রাজনীতিতে নিয়ে আসতে পারল না? সর্বশেষ বছরগুলোতে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভেতরে কেন সহ্যশক্তি হারিয়ে গেল মহামারীর মতো? এই কি ছিল তবে মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষা!

হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই এই দেশের নাগরিক। সবার নাগরিক মর্যাদা সমান। আপাতত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপরে হামলা এলেও পরবর্তীতে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের মানুষের ওপরে এ ধরনের গণ-আক্রমণ ঘটবে এটা নিশ্চিত। সুতরাং কেউ নিজেকে সংখ্যালঘু ভাববার প্রয়োজন নেই। ভীতসন্ত্রস্ত না হয়ে সম্প্রীতির বন্ধনে নিজ ভূমিতেই বাঁচার লড়াইয়ে জিততে হবে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অপরাজনীতি এবং মৌলবাদ মোকাবিলার সময় এসেছে। নির্যাতিতদের বোঝার সময় এসেছে ‘দেশে থাকলে ভোট পাব, দেশ ছাড়লে জমি পাব’ এই তত্ত্বধারীদের। যে মন একবার ভেঙে গেছে তা হয়তো সহজে আর জোড়া লাগবে না, কিন্তু সম্প্রীতিটা অটুট থাকুক। আরেক হাজার বছর বাঙালি সংস্কৃতি একসঙ্গে পাড়ি দেয়ার প্রত্যাশা।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

চিকিৎসা জগতের বাতিঘর জন হপকিনস বিশ^বিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও আজকের বাংলাদেশ

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ভূলণ্ঠিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি

সজীব ওয়াফি

শনিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২১

এ ভূখন্ডে বাঙালি সাংস্কৃতিক সম্প্রীতি হাজার বছরের পুরোনো। হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে সকলের বসবাস। ধর্মীয়ভাবে কেউ কারো প্রতিযোগী নয়, সহযোগী মাত্র। হিন্দু ময়রার তৈরি করা জিলাপিতে মসজিদে মিলাদ-মাহফিল হয়, ইসলামি জলসা হয়; তাতে কারো ধর্মের একচুল পরিমাণ খোয়া যায়নি। আবার মুসলমানদের হাতে তৈরি কাঁসার ঘটি-বাটি ব্যবহারে পুজোতেও কোনদিন অসুবিধা সৃষ্টি হয়নি। দুর্গাপূজার নাড়ু-সন্দেশ খেতে না পারলে মুসলমান বন্ধুরা যেমন অভিমান করে; ঠিক তেমনি ঈদের সময়ে সেমাই-পায়েস খাওয়ার দাওয়াত না দিলে হিন্দু বন্ধু মুসলমান বন্ধুর কাছে হাস্যোজ্বল অভিযোগ করে। গলাগলি করে বেড়ে উঠতে থাকে একে অপরের মান-অভিমান। মাঝে মধ্যেই ভেতরে প্রবেশ করে স্বার্থান্বেষী মহল। তৈরি হয় সামাজিক অস্থিরতা।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। দুর্গাপূজা কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মীয় সম্প্রীতি ভেঙে খানখান হয়েছে। পুজোর অষ্টমীর দিনে কুমিল্লার নানুয়া দীঘির পাড়ে পূজা মন্ডপে প্রদর্শনী হিসেবে রাখা হনুমান দেবতার কোলে ইসলামের সর্বোচ্চ ধর্মীয়গ্রন্থ রাখার অভিযোগ আসে। তৈরি হয় হৈ-হট্টগোল। কুমিল্লাসহ সারাদেশে হামলা করে ভেঙে ফেলা হয় অগুনিত মন্ডপ। অনাকাক্সিক্ষত সাম্প্রদায়িক আগুন জ্বলে উঠে সারাদেশে। নোয়াখালী, রংপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, গাইবান্ধা, সিলেটে ঘটে সাম্প্রদায়িক হামলার ন্যক্কারজনক বিভৎস ঘটনা। এর ভেতরে রংপুরের মাঝিপাড়ায় হিন্দুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ-লুটপাট সম্প্রীতি নষ্টে ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। অভিযোগ আছে-চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে নিয়ন্ত্রণ নিতে গেলে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন আহত-নিহত হওয়ার।

কোন প্রকৃত সনাতন ধর্মাবলম্বী মন্ডপে পবিত্র কোরআন রাখতে যায়নি। নিজেদের সম্পদায়ের ওপর মৌলবাদী আক্রমণ আসতে পারে এ রকম আচরণ তারা পূর্বে কখনোই করেননি এবং ভবিষ্যতেও করবেন না বলে বিশ্বাস আছে। অন্যদিকে কোন প্রকৃত মুসলমান কোরআন শরিফ মন্দিরে নিয়ে গিয়ে দুর্গা উৎসব পন্ড করার ধৃষ্টতা দেখাবেন না; কারণ ইসলামেই এ ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। অথচ এটা নিয়েই হাঙ্গামা লাগলো, সঙ্গে যোগ হয়েছে নানা দিকের নানা গুজব। ঐতিহাসিক বিশ্লেষণে- আমাদের এ ভূখন্ডে যতবারই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভূলণ্ঠিত হয়েছে, ততবারই রাজনৈতিক নানা সমীকরণ সামনে এসেছে। অর্থাৎ মন্ডপে কোরআন রেখে অবমাননার অভিযোগ তুলে প্রতিমা ভাঙচুর, হিন্দুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ-লুটপাটে স্বার্থান্বেষী মহল যে জড়িত এটা দিনের মতো স্পষ্ট।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস অবস্থা। মোটা চালের দাম পৌঁছেছে প্রায় ষাট টাকার কাছাকাছি। বেড়েছে সিলিন্ডার গ্যাসের দাম। শাক সবজির বাজারে আগুন। খরচ বাঁচাতে সাধারণ মানুষের খাওয়া-দাওয়া কমাতে হচ্ছে। বাজারে গিয়ে ভাবতে হচ্ছে কি কিনবেন আর কি কিনবেন না। আগামী নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়েও সরকারিবিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছিল। দেশের ৫৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের ন্যায় নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের আইন করার উল্লেখ করেছেন। সরকার জানিয়েছে আগের মতোই সার্চ কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। বিশিষ্টজনদের পদক্ষেপের এই কারণ নির্বাচন কমিশন স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও আজ্ঞাবহ ভাবমূর্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে। যার অন্যতম নজির- দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে একটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধনের নির্দেশ কমিশনকে দেয়া হয়েছিল, দলটি নিবন্ধনের সমস্ত শর্ত পূরণ করলেও অজানা কারণে কমিশন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অতঃপর আদালতের হস্তক্ষেপে রায়ের চিঠি পাওয়ার ৩০ কর্ম দিবসের ভেতরেই কমিশন থেকে নিবন্ধন দেয়ার কথা, কিন্তু তৎপরবর্তী প্রায় তিন বছর অতিক্রম হতে চললেও ইসি কোন ধরনের ভূমিকা রাখেনি। নির্বাচন কমিশন আজ্ঞাবহ এবং আদালত অবমাননা করেছে কাগজে কলমে এটা প্রমাণ করার জন্য ওই রাজনৈতিক দল পুনরায় উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন মহামারী রূপে বেড়েছে, আছে ভোটারদের ভোট না দিতে পারার অভিযোগ। আস্থা এবং চ্যালেঞ্জের মুখে পরেছে নির্বাচন কমিশন। জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এ সব গণতান্ত্রিক সংকটগুলোর জোরেশোরে হল্লা তুলেছিল।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি শক্তিশালী অবস্থানে যেতে এখন পর্যন্ত দুর্বল। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা ঘটলে সেখানে বিজেপির শক্ত ঘাঁটি তৈরিতে সহায়ক হয়। ৩০ অক্টোবরে বিধান সভার একটি উপনির্বাচন সামনে রেখে বিজেপি প্রতিনিধি শুভেন্দু অধিকারী ইতোমধ্যে বলেছেনও যে, ‘বাংলাদেশের ঘটনায় আরও তিনগুণ বেশি ভোটে জিতব।’ অর্থাৎ একদিকে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির রাজনীতি শক্তিশালী করণের আকাক্সক্ষা, অন্যদিকে বাংলাদেশের উদ্ভূত পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে কুমিল্লা লাগোয়া ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগত নির্বাচনী লাভের ছক তো আছেই। আছে বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিল বাস্তবায়ন অঙ্কের হিসাব।

করোনা প্রাদুর্ভাব স্থিতিশীল পরবর্তী চাকরির বাজারে একের পর এক দুর্নীতি ধরা পরছে। সামনে এসেছে করোনায় তরুণদের বয়সজনিত সমস্যা। তার উপরে সমন্বয়হীনতায় ২০-২৫টা পরীক্ষা একেই দিনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আইনতঃ সব প্রার্থী পরীক্ষায় বসার অধিকার রাখে। সেখানে একসঙ্গে একেই দিনে অনেক পরীক্ষা হওয়ায় তরুণদের মাঝে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। দায়িত্বশীল বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলেও ছাত্রদের সমাধান হয়নি। বরং একজন বেকারের বহুল আকাক্সিক্ষত বিসিএস পরীক্ষার মতো দিনেও রাখা হয়েছে একাধিক পরীক্ষা। ছাত্র আন্দোলন গুছিয়ে উঠতেছিল প্রায়। দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, নির্বাচন কমিশনে আস্থার সংকট, বেকারত্বে তরুণদের হতাশায় চারিদিকে জনরোষ তৈরি হয়েছে এ রকম সময়েই সারাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলায় অস্থির হয়ে উঠল। বিষাক্ত ছোবলে তলিয়ে গেল মানুষের অধিকারের মিছিল।

হিন্দু ময়রার তৈরি করা জিলাপিতে মসজিদে

মিলাদ-মাহফিল হয়, ইসলামি জলসা হয়; তাতে কারো ধর্মের একচুল পরিমাণ খোয়া যায়নি। আবার মুসলমানদের হাতে তৈরি কাঁসার ঘটি-বাটি ব্যবহারে পুজোতেও কোনদিন অসুবিধা সৃষ্টি হয়নি

বিগত ২০ বছরে বাংলাদেশ অসংখ্যবার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। গত ১২ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হামলায় হামলায় সংখ্যালঘুরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরেছেন। সবচেয়ে বড় মানসিক আঘাতটা এলো এবারের দুর্গাপূজায়। সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি-মন্দিরে হামলার বিচারের আওতায় আনতে সব সরকারই অনিহা দেখিয়েছে। রামুতে বৌদ্ধ পল্লীতে হামলার বিচার হয়নি, বিচার হয়নি যশোরের অভয়নগরে জেলে পল্লীতে হামলারও, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হামলার বিচার পাওয়ার সম্ভাবনাও শূন্য। অত্যন্ত বিস্ময়কর যে সরকার না ঘুরতেই নাসিরনগর হামলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে অভিযুক্ত তিনজনকে আওয়ামী লীগ সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনে নমিনেশন দিয়ে পুরস্কৃত করেছে। অধিকন্তু নাগরিক তদন্তে এবং নির্যাতিতদের বয়ানে দেখা গেছে এই সব হামলার সঙ্গে কোন না কোনভাবে সরকারদলীয় প্রভাবশালীরা জড়িত। ফলে সাময়িক চাঞ্চল্য তৈরি হলেও প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। সত্যি বলতে বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি কি নতুন করে হামলার প্রেক্ষাপট উসকে দেয়নি? ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা কি নিরাপত্তার অভাববোধ করে নিজ ভূমি ত্যাগ করেননি! নতুবা স্বাধীনতা-পরবর্তী যেখানে জনসংখ্যার ১৩.৫% হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন, সেখানে এখন ৮% এ নামলো কি করে? কি করে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েও সংখ্যালঘু সংখ্যার পতন ঘটল!

মহা-অষ্টমীর দিনে কুমিল্লার ঘটনা দৃষ্টিগোচর হয় সকালে। সময় অতিবাহিত হলেও সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়া হয়নি, অল্পতে সমাধান করা সম্ভব হলেও তার কোন চেষ্টা প্রশাসন থেকে হয়নি। সেই সুযোগটাই মৌলবাদীরা নিয়েছে। নিরাপত্তা প্রদানের সদিচ্ছাই যদি থাকবে, তবে কুমিল্লার ঘটনার পরেও সারাদেশে কীভাবে পূজামন্ডপগুলো অনিরাপদ হয়ে পড়ল? যেখানে সারাদেশে পাড়া-মহল্লায় ওয়ার্ড পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দলীয় কমিটি আছে, সেখানে কি করে স্বার্থান্বেষী মহল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে? রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার তার আওতায় ঘটনা নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন, ফলে তার কপালে বদলি জুটেছে! অথচ এই লেখার সময় পর্যন্ত কুমিল্লা, নোয়াখালী বা চাঁদপুরে কিন্তু কারো বদলির ঘটনা ঘটেনি। দ্বিতীয়ত সাত দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ইকবাল নামের একজন কে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফুটেজে ইকবাল নামের ওই ব্যক্তির আচরণ অত্যন্ত পরিকল্পিত ঘটনার ইঙ্গিত দেয়। পেছনে বৃহৎ শক্তি না থাকলে এত বড় ঘটনা ঘটানো অসম্ভব। সুতরাং পর্দার আড়ালে প্রভাবশালী মহলের ইঙ্গিত আছে এটা পরিষ্কার। উত্তেজনা প্রশমিত করতে কেন দ্রুত ঘটনার বিস্তারিত উদ্ঘাটন করা হলো না? প্রভাবশালীদের পাড় পাইয়ে দিতেই এবং সারাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রান্ত বৃদ্ধি করতেই কি নাটকীয় আয়োজন? দ্রব্যমূল্য-নির্বাচন কমিশনের আলাপ চাপা দিতেই নতুন ইস্যু সৃষ্টির প্রয়োজন হয়েছিল? নাকি মৌলবাদীরা দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘাপটি মেরে আছে? খাপটি মেরে থাকলে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া দাবিদার দল আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকেও কেন মৌলবাদীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি অথবা মূল ধারার রাজনীতিতে নিয়ে আসতে পারল না? সর্বশেষ বছরগুলোতে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভেতরে কেন সহ্যশক্তি হারিয়ে গেল মহামারীর মতো? এই কি ছিল তবে মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষা!

হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই এই দেশের নাগরিক। সবার নাগরিক মর্যাদা সমান। আপাতত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপরে হামলা এলেও পরবর্তীতে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের মানুষের ওপরে এ ধরনের গণ-আক্রমণ ঘটবে এটা নিশ্চিত। সুতরাং কেউ নিজেকে সংখ্যালঘু ভাববার প্রয়োজন নেই। ভীতসন্ত্রস্ত না হয়ে সম্প্রীতির বন্ধনে নিজ ভূমিতেই বাঁচার লড়াইয়ে জিততে হবে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অপরাজনীতি এবং মৌলবাদ মোকাবিলার সময় এসেছে। নির্যাতিতদের বোঝার সময় এসেছে ‘দেশে থাকলে ভোট পাব, দেশ ছাড়লে জমি পাব’ এই তত্ত্বধারীদের। যে মন একবার ভেঙে গেছে তা হয়তো সহজে আর জোড়া লাগবে না, কিন্তু সম্প্রীতিটা অটুট থাকুক। আরেক হাজার বছর বাঙালি সংস্কৃতি একসঙ্গে পাড়ি দেয়ার প্রত্যাশা।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

back to top