হাবিবুর রহমান স্বপন
পাবনায় মাসব্যাপী ‘একুশে বইমেলা’ শুরু হয়েছে। ঢাকায় বাংলা একাডেমি আয়োজিত মাসব্যাপী গ্রন্থমেলার পর দেশে একমাত্র পাবনাতেই এক মাসব্যাপী বইমেলা হয়ে থাকে।
এই বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২০০৭ সাল থেকে। দেশে যখন সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন উঠতে শুরু করল তখন বই থেকে দূরে সরে যেতে লাগল নতুন প্রজন্ম। যুবকরা ক্রমান্বয়ে মোবাইল ফোনে ঝুঁকে পড়তে লাগল। অনেকেই বই থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিল। তখন বইবিমুখ জাতিকে বইয়ের দিকে ফিরিয়ে আনতে কয়েকজন সাংস্কৃতিক কর্মী উদ্যোগ নেন। তারা আলোচনা করেন বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করেন এমন ক’জন মানুষের সঙ্গে। যাদের মধ্যে ছিলেন রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী প্রমুখ।
আলোচনার জন্য বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সুলতান আহমদ বুড়োর বাড়িতে বসে আসর। সেই আসরে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় পাবনায় বইমেলা করার। যে কথা সেই কাজ। শুরু হলো ৭ দিনের বইমেলা ২০০৭। শুরুতে সর্বসম্মতিক্রমে ‘একুশে বইমেলা উদযাপন পরিষদ’ এর সভাপতি নির্বাচিত হন সুলতান আহমেদ বুড়ো এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন কমরেড জাকির হোসেন। অ্যাডভোকেট কবি আজিজুল হক, মোক্তার হোসেন, সাংস্কৃতিক সংগঠক গোপাল সান্যাল, রেজাউল করিম মণি, সাইদুল হক চুন্নু, আলফাজ হোসেন মুকুল, সংগীতজ্ঞ আবুল হাশেম, স্বাধীন মজুমদার, কবি গোলাম রব্বানিসহ বেশ ক’জন প্রথম সভায় উপস্থিত ছিলেন। এরপর অনেকেই যুক্ত হন এই শুভ কর্মে।
পরের বছর মেলার সময়সীমা বাড়ল ১০ দিন। তার পরের বছর ১৫ দিন। চতুর্থ বছরে ২০১০ সালে মেলা হয় ২১ দিন। তারপর পুরো ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী একুশে বইমেলা হতে থাকে। সব সময়ই একুশে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে পাবনা টাউন হল প্রাঙ্গণে। যথারীতি এবারও একই স্থানে মেলা হচ্ছে।
দেশে প্রায়ই ভালো কাজে প্রতিবন্ধকতা হয়ে থাকে। পাবনার একুশে বইমেলাতেও একই সমস্যার সূত্রপাত হয়। ২০১৪ সালে বইমেলা দখল হয়ে যায়। যারা বইমেলার স্বপ্নদ্রষ্টা তাদের বাদ দিয়ে চলে বইমেলা। তবে সেই বইমেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা এবং প্রতিদিনের আলোচনানুষ্ঠানে প্রাণ ছিল না।
২০১৯ ও ২০২০ সালে করোনাজনিত কারণে বইমেলা হয়নি। তারপর ২০২১ সালে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৫ সালে কমরেড জাকির হোসেনকে সভাপতি এবং সাংবাদিক হাবিবুর রহমান স্বপনকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি গঠিত হয়। ২০২২ সালে এই কমিটি একুশে বইমেলা করে ২০ দিন ব্যাপী। অর্থাৎ ছন্দপতন হয়। এক মাসের মেলা ২০ দিন চলে। এবার ২০২৩-এর একুশে বইমেলা হবে ২৮ দিন অর্থাৎ পুরো ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী।
এছাড়া স্থানীয় মেলায় প্রতিদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। গান, নাটক, নাচ ছাড়াও আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। এবারের মেলায় গান (দেশাত্ববোধক, রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীত, লোকগীতি ইত্যাদি) আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, যন্ত্র সংগীত ও রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
বই আর দেশীয় সংস্কৃতি নতুন প্রজন্মকে মোবাইল আসক্তি থেকে ফেরাবে, মাদকের সর্বনাশা জগৎ থেকে দূরে রাখবে সেটাই আশা।
[লেখক: সাংবাদিক]
হাবিবুর রহমান স্বপন
শুক্রবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
পাবনায় মাসব্যাপী ‘একুশে বইমেলা’ শুরু হয়েছে। ঢাকায় বাংলা একাডেমি আয়োজিত মাসব্যাপী গ্রন্থমেলার পর দেশে একমাত্র পাবনাতেই এক মাসব্যাপী বইমেলা হয়ে থাকে।
এই বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২০০৭ সাল থেকে। দেশে যখন সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন উঠতে শুরু করল তখন বই থেকে দূরে সরে যেতে লাগল নতুন প্রজন্ম। যুবকরা ক্রমান্বয়ে মোবাইল ফোনে ঝুঁকে পড়তে লাগল। অনেকেই বই থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিল। তখন বইবিমুখ জাতিকে বইয়ের দিকে ফিরিয়ে আনতে কয়েকজন সাংস্কৃতিক কর্মী উদ্যোগ নেন। তারা আলোচনা করেন বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করেন এমন ক’জন মানুষের সঙ্গে। যাদের মধ্যে ছিলেন রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী প্রমুখ।
আলোচনার জন্য বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সুলতান আহমদ বুড়োর বাড়িতে বসে আসর। সেই আসরে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় পাবনায় বইমেলা করার। যে কথা সেই কাজ। শুরু হলো ৭ দিনের বইমেলা ২০০৭। শুরুতে সর্বসম্মতিক্রমে ‘একুশে বইমেলা উদযাপন পরিষদ’ এর সভাপতি নির্বাচিত হন সুলতান আহমেদ বুড়ো এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন কমরেড জাকির হোসেন। অ্যাডভোকেট কবি আজিজুল হক, মোক্তার হোসেন, সাংস্কৃতিক সংগঠক গোপাল সান্যাল, রেজাউল করিম মণি, সাইদুল হক চুন্নু, আলফাজ হোসেন মুকুল, সংগীতজ্ঞ আবুল হাশেম, স্বাধীন মজুমদার, কবি গোলাম রব্বানিসহ বেশ ক’জন প্রথম সভায় উপস্থিত ছিলেন। এরপর অনেকেই যুক্ত হন এই শুভ কর্মে।
পরের বছর মেলার সময়সীমা বাড়ল ১০ দিন। তার পরের বছর ১৫ দিন। চতুর্থ বছরে ২০১০ সালে মেলা হয় ২১ দিন। তারপর পুরো ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী একুশে বইমেলা হতে থাকে। সব সময়ই একুশে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে পাবনা টাউন হল প্রাঙ্গণে। যথারীতি এবারও একই স্থানে মেলা হচ্ছে।
দেশে প্রায়ই ভালো কাজে প্রতিবন্ধকতা হয়ে থাকে। পাবনার একুশে বইমেলাতেও একই সমস্যার সূত্রপাত হয়। ২০১৪ সালে বইমেলা দখল হয়ে যায়। যারা বইমেলার স্বপ্নদ্রষ্টা তাদের বাদ দিয়ে চলে বইমেলা। তবে সেই বইমেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা এবং প্রতিদিনের আলোচনানুষ্ঠানে প্রাণ ছিল না।
২০১৯ ও ২০২০ সালে করোনাজনিত কারণে বইমেলা হয়নি। তারপর ২০২১ সালে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৫ সালে কমরেড জাকির হোসেনকে সভাপতি এবং সাংবাদিক হাবিবুর রহমান স্বপনকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি গঠিত হয়। ২০২২ সালে এই কমিটি একুশে বইমেলা করে ২০ দিন ব্যাপী। অর্থাৎ ছন্দপতন হয়। এক মাসের মেলা ২০ দিন চলে। এবার ২০২৩-এর একুশে বইমেলা হবে ২৮ দিন অর্থাৎ পুরো ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী।
এছাড়া স্থানীয় মেলায় প্রতিদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। গান, নাটক, নাচ ছাড়াও আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। এবারের মেলায় গান (দেশাত্ববোধক, রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীত, লোকগীতি ইত্যাদি) আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, যন্ত্র সংগীত ও রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
বই আর দেশীয় সংস্কৃতি নতুন প্রজন্মকে মোবাইল আসক্তি থেকে ফেরাবে, মাদকের সর্বনাশা জগৎ থেকে দূরে রাখবে সেটাই আশা।
[লেখক: সাংবাদিক]