alt

উপ-সম্পাদকীয়

নবান্ন : ফসল ঘরে তোলার উৎসব

এস ডি সুব্রত

: বুধবার, ১৬ নভেম্বর ২০২২

মাঠ ভরা ধানে সোনালী ছোঁয়া লাগলেই গ্রাম-বাংলায় বোঝা যায় নবান্ন আসছে। কথায় আছে বাঙালিদের বারো মাসে তের পার্বণ। বাংলাদেশের মানুষ উৎসবে আনন্দে মেতে থাকতে পছন্দ করে। বাংলাদেশে প্রচলিত উৎসবের মধ্যে নবান্ন উৎসব অন্যতম। নবান্ন মানে নব বা নতুন অন্ন। আমাদের দেশে নতুন ফসল ঘরে তোলা উপলক্ষে কৃষকরা এই উৎসব পালন করে থাকে। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে যখন আমন ধান কাটা হয় তখন নবান্ন উৎসব পালন করা হয়। এই নতুন ধানের চাল দিয়ে রান্না উপলক্ষে নবান্ন উৎসব হয়ে থাকে। নবান্ন হচ্ছে ঋতুকেন্দ্রিক একটি উৎসব। হেমন্তে নতুন ফসল ঘরে তোলার সময় এই উৎসব পালন করা হয়। এই উৎসব পালিত হয় অগ্রহায়ণ মাসে। অগ্র অর্থ ‘প্রথম’। আর ‘হায়ণ’ অর্থ ‘মাস’। এ থেকে সহজেই ধারণা করা হয়, একসময় অগ্রহায়ণ মাসই ছিল বাংলা বছরের প্রথম মাস। সমাজ ও সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই মানুষের খাদ্য সংগ্রহ ও খাদ্য উৎপাদনের সাফল্যকে কেন্দ্র করে উদ্ভব ঘটেছে নানা উৎসব ও অনুষ্ঠানের।

সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারাবাহিকতায় মানব সভ্যতার যখন খাদ্য আহরণ যুগ থেকে কৃষি অর্থনীতির যুগে উত্তরণ ঘটে তখন ফসল উৎপাদনের পেছনে কোন না কোন অদৃশ্য দৈব শক্তির অস্তিত্ব কল্পনা করে মানুষের মনে জন্ম নিয়েছে নানা বিশ্বাস ও সংস্কার। বীজ বোনা থেকে শুরু করে ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে এ ধরনের দৈবশক্তির সাহায্য প্রার্থনা করে নানা আচার-অনুষ্ঠান, পূজা-অর্চনা যুক্ত হয়েছে এসব উৎসবে। নবান্ন উৎসব উপলক্ষে নতুন চালের তৈরি পায়েশ-পোলাও, পিঠা-পুলিসহ রকমারি খাদ্য-সামগ্রী পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হয়।

পাশাপাশি পালন করা হয় সামাজিকভাবে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী নানা আচার-অনুষ্ঠান। ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুযায়ী এসব আচার আনুষ্ঠানিকতায় বৈচিত্র্য রয়েছে। মুসলিম কৃষক সমাজে নতুন ফসল ঘরে ওঠার জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্য বাড়ি বাড়ি কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, মসজিদ ও দরগায় শিরনির আয়োজন করা হয়। সনাতন তথা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী অন্ন লক্ষ্মীতুল্য। তাই তারা এ দেবীর উদ্দেশ্য পূজা-অর্চনার আয়োজন করে। এছাড়া নবান্ন অনুষ্ঠানে নতুন অন্ন পিতৃপুরুষ, দেবতা, কাক ইত্যাদি প্রাণীকে উৎস্বর্গ করে এবং আত্মীয়-স্বজনকে পরিবেশন করার পর গৃহকর্তা ও পরিবারবর্গ নতুন গুড়সহ নতুন অন্ন গ্রহণ করেন। নতুন চালের তৈরি খাদ্যসামগ্রী কাককে নিবেদন করা নবান্নের অঙ্গ একটি বিশেষ লৌকিক প্রথা।

লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, কাকের মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছে যায়। এই নৈবেদ্যকে বলে ‘কাকবলি’। একটি কলার ডোগায় নতুন চাল, কলা, নারকেল নাড়ু কাককে খাওয়াতে হয়। প্রচলিত বিশ্বাস হচ্ছে কাকের মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছে যায়। কাকবলির আগে আরও তিনটি আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হতো- লক্ষ্মীপূজা, পিতৃশ্রাদ্ধ, বীরবাশ। বরিশাল অঞ্চলে প্রচলিত আছে বীরবাশ প্রথা। বাড়ির উঠানের মাঝখানে একটি গর্ত করা হয়। তার চারপাশে পিটুলী দিয়ে আলপনা আঁকা হয়। গর্তে জ্যান্ত কই মাছ ও কিছু দুধ দিয়ে একটি বাঁশ পোঁতা হয়। সেই বাঁশের প্রতি কঞ্চিতে ধানের ছড়া বাঁধতে হয়। এটাকে বীরবাশ বলে।

নবান্ন উৎসব উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাসব্যাপী উৎসব হতো আগেকার দিনে। এ উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালিদের বহুদিনের প্রথা ও বিশ্বাস।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

চিকিৎসা জগতের বাতিঘর জন হপকিনস বিশ^বিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও আজকের বাংলাদেশ

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

tab

উপ-সম্পাদকীয়

নবান্ন : ফসল ঘরে তোলার উৎসব

এস ডি সুব্রত

বুধবার, ১৬ নভেম্বর ২০২২

মাঠ ভরা ধানে সোনালী ছোঁয়া লাগলেই গ্রাম-বাংলায় বোঝা যায় নবান্ন আসছে। কথায় আছে বাঙালিদের বারো মাসে তের পার্বণ। বাংলাদেশের মানুষ উৎসবে আনন্দে মেতে থাকতে পছন্দ করে। বাংলাদেশে প্রচলিত উৎসবের মধ্যে নবান্ন উৎসব অন্যতম। নবান্ন মানে নব বা নতুন অন্ন। আমাদের দেশে নতুন ফসল ঘরে তোলা উপলক্ষে কৃষকরা এই উৎসব পালন করে থাকে। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে যখন আমন ধান কাটা হয় তখন নবান্ন উৎসব পালন করা হয়। এই নতুন ধানের চাল দিয়ে রান্না উপলক্ষে নবান্ন উৎসব হয়ে থাকে। নবান্ন হচ্ছে ঋতুকেন্দ্রিক একটি উৎসব। হেমন্তে নতুন ফসল ঘরে তোলার সময় এই উৎসব পালন করা হয়। এই উৎসব পালিত হয় অগ্রহায়ণ মাসে। অগ্র অর্থ ‘প্রথম’। আর ‘হায়ণ’ অর্থ ‘মাস’। এ থেকে সহজেই ধারণা করা হয়, একসময় অগ্রহায়ণ মাসই ছিল বাংলা বছরের প্রথম মাস। সমাজ ও সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই মানুষের খাদ্য সংগ্রহ ও খাদ্য উৎপাদনের সাফল্যকে কেন্দ্র করে উদ্ভব ঘটেছে নানা উৎসব ও অনুষ্ঠানের।

সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারাবাহিকতায় মানব সভ্যতার যখন খাদ্য আহরণ যুগ থেকে কৃষি অর্থনীতির যুগে উত্তরণ ঘটে তখন ফসল উৎপাদনের পেছনে কোন না কোন অদৃশ্য দৈব শক্তির অস্তিত্ব কল্পনা করে মানুষের মনে জন্ম নিয়েছে নানা বিশ্বাস ও সংস্কার। বীজ বোনা থেকে শুরু করে ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে এ ধরনের দৈবশক্তির সাহায্য প্রার্থনা করে নানা আচার-অনুষ্ঠান, পূজা-অর্চনা যুক্ত হয়েছে এসব উৎসবে। নবান্ন উৎসব উপলক্ষে নতুন চালের তৈরি পায়েশ-পোলাও, পিঠা-পুলিসহ রকমারি খাদ্য-সামগ্রী পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হয়।

পাশাপাশি পালন করা হয় সামাজিকভাবে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী নানা আচার-অনুষ্ঠান। ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুযায়ী এসব আচার আনুষ্ঠানিকতায় বৈচিত্র্য রয়েছে। মুসলিম কৃষক সমাজে নতুন ফসল ঘরে ওঠার জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্য বাড়ি বাড়ি কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, মসজিদ ও দরগায় শিরনির আয়োজন করা হয়। সনাতন তথা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী অন্ন লক্ষ্মীতুল্য। তাই তারা এ দেবীর উদ্দেশ্য পূজা-অর্চনার আয়োজন করে। এছাড়া নবান্ন অনুষ্ঠানে নতুন অন্ন পিতৃপুরুষ, দেবতা, কাক ইত্যাদি প্রাণীকে উৎস্বর্গ করে এবং আত্মীয়-স্বজনকে পরিবেশন করার পর গৃহকর্তা ও পরিবারবর্গ নতুন গুড়সহ নতুন অন্ন গ্রহণ করেন। নতুন চালের তৈরি খাদ্যসামগ্রী কাককে নিবেদন করা নবান্নের অঙ্গ একটি বিশেষ লৌকিক প্রথা।

লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, কাকের মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছে যায়। এই নৈবেদ্যকে বলে ‘কাকবলি’। একটি কলার ডোগায় নতুন চাল, কলা, নারকেল নাড়ু কাককে খাওয়াতে হয়। প্রচলিত বিশ্বাস হচ্ছে কাকের মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছে যায়। কাকবলির আগে আরও তিনটি আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হতো- লক্ষ্মীপূজা, পিতৃশ্রাদ্ধ, বীরবাশ। বরিশাল অঞ্চলে প্রচলিত আছে বীরবাশ প্রথা। বাড়ির উঠানের মাঝখানে একটি গর্ত করা হয়। তার চারপাশে পিটুলী দিয়ে আলপনা আঁকা হয়। গর্তে জ্যান্ত কই মাছ ও কিছু দুধ দিয়ে একটি বাঁশ পোঁতা হয়। সেই বাঁশের প্রতি কঞ্চিতে ধানের ছড়া বাঁধতে হয়। এটাকে বীরবাশ বলে।

নবান্ন উৎসব উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাসব্যাপী উৎসব হতো আগেকার দিনে। এ উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালিদের বহুদিনের প্রথা ও বিশ্বাস।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

back to top